গাড়ির গতির সামনে পড়ে মৃত্যু হল অন্তঃসত্ত্বা বাঘরোলের, চালকদের দুষছে হতাশ পরিবেশ কর্মীরা

কল্যাণ অধিকারী, এডিটর রাজন্যা নিউজ

গাড়ির গতির সামনে পড়ে জন্মানোর আগেই সন্তান সমেত মৃত্যু হল একটি পূর্ণবয়স্ক বাঘরোলের। রক্তাক্ত বাঘরোলটির সামনে দাঁড়িয়ে দীর্ঘশ্বাস পরিবেশ কর্মীদের। গ্রামীণ হাওড়ার বিভিন্ন রাস্তার ধারে ফলক লাগানো হয়েছে। লেখা রয়েছে বন্যপ্রাণীর চলাচলের পথ গাড়ির গতি কম রাখুন। কিন্তু শোনে ক’জন! আপাতত বাঘরোলটির ময়নাতদন্তের ব্যবস্থা করেছে বন দপ্তর।

বাগনান-মানকুর সড়কে মানকুর পেট্রোল পাম্পের কাছে সোমবার সকালে পড়ে থাকে একটি বাঘরোলের দেহ। ফাঁকা রাস্তায় হুশ হুশ করে গাড়ি চলাচল করছে। একটু সরিয়েও কেউ দেয়নি। পরিবেশকর্মী যুবক দেবরাজ আরু ওই রাস্তা দিয়েই টিউশন পড়াতে যাচ্ছিল। সাইকেল থামিয়ে কাছে যেতেই চিনতে অসুবিধা হয়নি। পশ্চিমবঙ্গের ‘রাজ্য প্রাণী’ বাঘরোল বা মেছো বিড়াল গতির সামনে প্রাণ হারিয়েছে। এমনিতেই বাসস্থান সহ নানা সমস্যায় জর্জরিত হয়ে বাঘরোল এখন ‘বিপন্ন’ তালিকাভুক্ত। তারমধ্যেও গ্রামীণ হাওড়ার বিভিন্নপ্রান্তে যতগুলো ছড়িয়ে ছিটিয়ে বেঁচে রয়েছে তারমধ্যে একটা অংশ বেঘোরে প্রাণ হারাচ্ছে শুধুমাত্র গাড়ির গতির সামনে পড়ে। পরিবেশ কর্মী চিত্রক প্রামাণিকের কথায়, “গ্রামীণ হাওড়ার আমতা-২ ব্লকের বিস্তৃরণ অংশ ও বাগনান-১ ও ২ ব্লক এবং শ্যামপুরে রয়েছে বাঘরোল। খাদ্যের সন্ধানে রাস্তা পার করে যেতে গিয়ে দুর্ঘটনার কবলে পড়ে। তারপর বাসস্থান সমস্যা তো রয়েছে। হোগলা ও খড়ি বন কমে যাওয়ায় এরা বাসস্থান দ্রুত হারাচ্ছে। তারপর লুকিয়ে মেরে দেওয়ার ঘটনাও সামনে আসছে!”

বন দপ্তরের এক আধিকারিকের কথায়, এদিনের ঘটনাটি অত্যন্ত মর্মান্তিক। অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় ছিল। একটা বাঘরোল মারা গেল সঙ্গে বেশ কয়েকটা সন্তানকে নিয়ে। বাংলার এই প্রাণী একটা সময় যথেষ্ট ছিল। কিন্তু এখন তা বিলুপ্ত হতে বসেছে। তারপর পথ দুর্ঘটনায় মৃত্যু হচ্ছে বাঘরোলের। এর আগে গত জানুয়ারিতে কালিকাপুরে তিনটি বাঘরোলকে পিটিয়ে মারা হয় এমনটাই অভিযোগ এসেছিল। পরিবেশ কর্মীরা চেষ্টা করছে তারপরো যা ঘটছে এদের টিকিয়ে রাখাটাই বড় চ্যালেঞ্জ! নজরদারি রাখা হচ্ছে। এই বাঘরোলটিকে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে গড়চুমুকে।

দেবারাজের কথায়, “ওই রাস্তা দিয়ে পড়াতে যাই। এদিন রাস্তায় পড়ে থাকতে দেখে সরিয়ে রাস্তার ধারে আনি। এবং বন দপ্তরে খবর দিই। ওঁদের টিম এসে উদ্ধার করে নিয়ে যায়। যেহেতু অন্তঃসত্ত্বা ছিল তাই মায়ের সঙ্গে কতগুলো শিশু জন্মের আগেই মৃত্যু হল। ওই রাস্তা দিয়ে হুশ হুশ করে আওয়াজ করে গাড়ি চলাচল করে। আশ্চর্যের বিষয় যে গতিতে গাড়ি গুলো ছোটে তার সামনে নেহাতই ক্ষুদ্র বাঘরোল। রাস্তা পারাপারের সময় প্রাণ হারাচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে বন্যপ্রাণীটা একদিন নীরবে হারিয়ে যাবে !”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *