কেদারনাথ যাত্রা দিঘা-পুরী দার্জিলিং বানিয়ে না ফেলে
কল্যাণ অধিকারী, এডিটর রাজন্যা নিউজ
কেদারনাথ পথে কপ্টার দুর্ঘটনা। চালক ও সহকারী চালক সহ ৬ জনের মর্মান্তিক মৃত। মঙ্গলবার বেলায় হোয়াটসঅ্যাপে মেসেজ ঢুকতেই চমকে গিয়েছি। স্মার্ট দুনিয়ায় কেদারনাথ ভ্রমণ এখন দিঘা-পুরী-দার্জিলিং মতো হাতের নাগালে পৌঁছে গেছে। তীর্থ ক্ষেত্রের পুণ্যতা এখন মুঠোফোনের ক্যামেরায় নজরবন্দি!
সমাজ মাধ্যমে রিলস ভিডিও, ইউটিউব ব্লগ তৈরির প্রবণতা তুঙ্গে। তা সফল করতে ছুটছে সকলে। সাহসী ছবি তুলে আনতে কেদারনাথ কেন কাশ্মীরের দুর্গম প্রদেশে পৌঁছে যাচ্ছে অনেকে। আজকের ঘটনা নতুন কিছু নয়। যেভাবে ঘোড়াগুলোকে বিশ্রাম না দিয়ে কেদারনাথ পথ বারেবারে অতিক্রম করানো হচ্ছে হিসাব নেই। রাস্তাতেই মৃত্যু হচ্ছে কতো ঘোড়ার। যা দেখে তীর্থযাত্রীদের চোখে জল। এদিনের দুর্ঘটনা কপ্টারের ইঞ্জিন গরম হয়ে যাওয়া বা আবহাওয়া খারাপের কারণে বিগড়ে যাওয়া ঘটছে বলেই অনেকের মত! এদিনের কপ্টার দুর্ঘটনার সমস্তটা উঠে আসবে ব্লাকবক্স উদ্ধার হলে!
কেদারনাথ যাত্রা করতে লাখো মানুষ রওনা দিচ্ছেন। গৌরীকুন্ডু থেকে বেশিরভাগ মানুষ হেঁটে যাত্রা করেন। আবার অনেকে ঘোড়ায়, ডান্ডি আবার কেউ কান্ডিতে চেপে যাত্রা করেন। মন্দিরের সামনে দাঁড়ালেই ভালোলাগা ও মুগ্ধতা মিলেমিশে একাকার। টিভিতে মহালয়ায় স্বর্গের কিছুটা দেখা মেলে, এ তো সাক্ষাৎ স্বর্গের কয়েক কদম দূরে দাঁড়িয়ে। চোখের সামনে জাগতিক ছবি। সমস্ত পূর্ণতা হৃদয়ে ভরে নেওয়া।
তবে যেভাবে পাহাড়ের কোলে হোটেল নির্মাণ হয়েছে তাতে করে প্রকৃতিগত বিষয়টি অনেকে সামনে আনছেন। এর আগে ২০১৩ সালে ভয়ংকর বিপর্যয়ের পর কেদারনাথ যাত্রা ও পূর্ণতাকে পিকনিকের পর্যায়ে কেউ কেউ নিয়ে যাচ্ছেন এমনটাই অনেকেই প্রশ্ন তুলেছিলেন। তাঁদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন শংকরাচার্য স্বামী স্বরূপানন্দ সরস্বতী। কেদারনাথ নয়, গঙ্গাসাগরের নির্মাণ কাজ নিয়েও তিনি প্রশ্ন তুলেছিলেন। তাঁর কথায় তীর্থ স্থানে কংক্রিটের নির্মাণকাজ করে তীর্থের পূর্ণতায় ব্যঘাত ঘটছে! আরো কয়েককদম এগিয়ে তিনি বিতর্কিত মন্ত্রব্য করেন, ‘নবদম্পতি হানিমুন করতে কেদারনাথ যাচ্ছেন’! দেবতার স্থানে এখন যেভাবে মোবাইলে রিলস বানানো হচ্ছে, ব্লগ করা হচ্ছে তা দেখলে শংকরাচার্য ক্ষ্রুদ্ধ হয়ে উঠবেন।
কেদারনাথ যাত্রা স্মৃতিতে রাখতে অনেকেই মুহুর্তগুলো ধরে রাখছেন। এতে দোষের কিছু নেই। তবে মন্দিরক্ষেত্রে যেভাবে ভিডিও করা হচ্ছে তাতে করে কেদারনাথ যাত্রার উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য প্রশ্নের সম্মুখীন।
যে ছবিটা ছোট থেকে দেখে বড় হয়েছি। তা সামনে পেলে অবাক হয়ে যেতে হয়। আসলে এটাই তো সামনে থেকে দেখা স্বর্গ। তার পবিত্রতা রক্ষা করা সকলের প্রয়োজন। নইলে বিপর্যয় নামতে সময় লাগবে না এমনটাই মত অনেকের।