আজ রাতে ১২ রাজ্যে এসআইআর SIR ঘোষণা নির্বাচন কমিশনের
কল্যাণ অধিকারী, রাজন্যা নিউজ
জল্পনা-কল্পনার অবসান! পশ্চিমবঙ্গে এসআইআর ঘোষণা করে দিল নির্বাচন কমিশন। দ্বিতীয় পর্বে সমীক্ষা শুরু হচ্ছে আজ মঙ্গলবার ২৮ অক্টোবর। এই দ্বিতীয় পর্বে বাংলা-সহ থাকছে ১২টি রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল। ভোটার তালিকার নিবিড় সংশোধনী বা এসআইআর কাজ শুরু হচ্ছে বলে সোমবার বিকালে দিল্লির বিজ্ঞান ভবনে সাংবাদিক বৈঠকে ঘোষণা করলেন দেশের মুখ্য নির্বাচন কমিশনার জ্ঞানেশ কুমার। চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশিত হবে আগামী বছর ৭ ফেব্রুয়ারি। এসআইআরের চূড়ান্ত তালিকা ধরেই পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা নির্বাচন করতে চাইছে নির্বাচন কমিশন।
বিহারে এসআইআর-পর্ব শেষে বিধানসভা নির্বাচনের প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গিয়েছে। এবার দ্বিতীয় পর্ব। এই দ্বিতীয় পর্বে এসআইআর হবে পশ্চিমবঙ্গ, তামিলনাড়ু, উত্তরপ্রদেশ, রাজস্থান, ছত্তিশগড়, গোয়া, গুজরাত, কেরল, লাক্ষাদ্বীপ, মধ্যপ্রদেশ, পুদুচেরি এবং আন্দামান নিকোবরে। আগামী বছরের এপ্রিল-মে মাস নাগাদ, পশ্চিমবঙ্গ, অসম, কেরল, তামিলনাড়ু এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল পুদুচেরিতে বিধানসভা ভোট হওয়ার কথা। তার আগে এসআইআর-পর্ব মিটিয়ে নেবার কাজ সম্পূর্ণ করে নিতে চাইছে কমিশন। কিন্তু অসমে আগামী বছর বিধানসভা নির্বাচন থাকলেও, সেখানে এসআইআর হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন জ্ঞানেশ কুমার। কারণ, সেখানে এনআরসি প্রায় শেষের পথে। তা ছাড়া অসমের নিজস্ব বিধান রয়েছে। তাই অসমে হচ্ছে না এসআইআর।
জ্ঞানেশ কুমার এদিন জানিয়েছেন, ১৯৫১ সাল থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত দেশে এসআইআর হয়েছে মোট আট বার। ২১ বছর আগে শেষ বার এসআইআর হয়েছে, ২০০২ থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত। কমিশন জানিয়েছে, মঙ্গলবার থেকে শুরু হচ্ছে এনুমেরেশন ফর্ম ছাপা এবং বিএলওদের প্রশিক্ষণের কাজ। চলবে ৩ নভেম্বর পর্যন্ত। বাড়ি বাড়ি গিয়ে এনুমেরেশন ফর্ম দেওয়া হবে ৪ নভেম্বর থেকে ৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত। খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশিত হবে ৯ ডিসেম্বর। এই তালিকা নিয়ে অভিযোগ থাকলে তা ৯ ডিসেম্বর থেকে ৮ জানুয়ারির মধ্যে জানাতে হবে। অভিযোগ শোনা এবং খতিয়ে দেখার কাজ চলবে ৯ ডিসেম্বর থেকে ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত। চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশিত হবে ৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৬।
এসআইআর-এ কার কী কাজ তাও স্পষ্ট করেছে কমিশন। মূলত বিএলওরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে ফর্ম দেবেন এবং তা সংগ্রহ করবেন। ইআরওরা ভোটার তালিকা তৈরি, দাবি-আপত্তি শুনানি এবং চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করবেন। এইআরও ইআরও-কে সহায়তা করবেন। ইআরও-র সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে প্রথম আপিল শুনবেন ডিএম। ডিএমের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে দ্বিতীয় আপিল শুনবেন মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক। নতুন ভোটার কার্ড নিয়ে জ্ঞানেশ কুমার সাংবাদিক বৈঠকে স্পষ্ট করে দেন। তিনি বলেন, যাদের আবেদনপত্রে বদল রয়েছে। অর্থাৎ যাঁদের ঠিকানা বদল হয়েছে, যাঁদের পোলিং স্টেশন বদল হয়েছে, তাঁরা প্রত্যেকেই নতুন এপিক নম্বর পাবেন। বিহারের ক্ষেত্রেও তাঁদের সবাইকে নতুন এপিক নম্বর দেওয়া হয়েছে। গোটা দেশেই এই নিয়মই কার্যকর হবে। তাঁরা প্রত্যেকে নতুন এপিক নম্বর পাবেন।
এদিন কমিশনের সাংবাদিক বৈঠকে প্রশ্ন ওঠে, বাংলার মতো রাজ্যে যেখানে, শাসকের একাধিক নেতা এসআইআর নিয়ে হুঁশিয়ারি দিচ্ছেন, তাতে কীভাবে বাংলায় এসআইআর সম্ভব হবে? এই নিয়ে মুখ্য নির্বাচন কমিশনার জ্ঞানেশ কুমার বলেন, ‘আমি একটা বিষয় আরও একবার স্পষ্ট করে দিতে চাই, সংবিধানের অন্তর্গত সমস্ত সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানকে নিজের দায়িত্ব পালন করতে হয়। আর, পশ্চিমবঙ্গের কথা যদি বলি, কোনও বিরোধ নেই। নির্বাচন কমিশন বিশেষ নিবিড় সমীক্ষা করে নিজের দায়িত্ব পালন করছে। একইরকমভাবে রাজ্যগুলি নিজের দায়িত্ব পালন করবে।’ এরপরই তিনি বলেন, ‘সংবিধানের ৩২৪ অনুচ্ছেদের ৬ উপধারা বলছে, ভোট প্রক্রিয়ার সম্পন্ন করার জন্য যে ভোটকর্মীদের দরকার হয়, তা দিতে রাজ্য সরকার বাধ্য।
এদিন দিল্লিতে সাংবাদিক বৈঠকে, জ্ঞানেশ কুমার, ঘুরিয়ে বিহারের মানুষের প্রশংসা করেছেন। তিনি বলেন, ‘আজ আমরা এখানে এসআইআর-এর দ্বিতীয় পর্যায় নিয়ে আলোচনার জন্য এসেছি। বিহারের ভোটারদের অভিবাদন জানাই। সেখানে এসআইআর সফল করার জন্য সাড়ে ৭ কোটি মানুষ যোগ দিয়েছেন। সব রাজ্যের নির্বাচনী আধিকারিকের সঙ্গে দেখা করে এই প্রক্রিয়া নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছে কমিশন।’ এরপর তিনি বলেন, যে সমস্ত রাজ্যে এসআইআর করা হবে, সেই সমস্ত রাজ্যের ভোটার তালিকা এদিন রাত ১২ টায় ফ্রিজ করে দেওয়া হবে। সেই তালিকার সমস্ত ভোটারকে বিএলও-রা ইউনিক এনুমেরেশন ফর্ম দেবেন। বিএলওরা বিদ্যমান ভোটারদের কাছে ফর্ম বিতরণ শুরু করার পর, যাদের নাম গণনা ফর্মে রয়েছে তাঁরা সকলেই ২০০২ সালের ভোটার তালিকায় তাঁদের নাম ছিল কিনা তা মেলানোর চেষ্টা করবেন। যদি হ্যাঁ হয়, তাহলে তাঁদের কোনও অতিরিক্ত নথি জমা দেওয়ার প্রয়োজন নেই। যদি তাঁদের নাম না থাকে, কিন্তু তাঁদের বাবা-মায়ের নাম তালিকায় থাকে, তাহলে তাঁদেরও কোনও অতিরিক্ত নথি জমা দেওয়ার প্রয়োজন নেই।
মুখ্য নির্বাচন কমিশনার জানান, ৪ নভেম্বর-৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়িতে বাড়িতে এনুমারেশন ফর্ম দেওয়া হবে।
৯ ডিসেম্বর: খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশ
৯ ডিসেম্বর-৮ জানুয়ারি: জানানো যাবে অভিযোগ
৯ ডিসেম্বর-৩১ জানুয়ারি: অভিযোগের ভিত্তিতে শুনানি
৩১ জানুয়ারির মধ্যে বাংলা-সহ ১২ রাজ্যে এসআইআর শেষ।
৭ ফেব্রুয়ারি: চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ।
নিবার্চন কমিশনের এসআইআর বিজ্ঞপ্তি ঘোষণার পর সন্ধে ৬টা পর্যন্ত তৃণমূলের সেনাপতি বা সুপ্রিমো সাংবাদিকদের মুখোমুখি হননি। যদিও তৃণমূল কংগ্রেসের অন্যতম রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে এসআইআর নিয়ে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। তিনি বলেন, রাজ্যের কোনও বৈধ ভোটারের নাম বাদ গেলে দিল্লিতে অভিযান হবে। এক লাখ কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে দিল্লিতে নির্বাচন কমিশনের দফতর ঘেরাও করা হবে।

