সিঙ্গুরের ন্যানো হারানো জমিতে মাছের ভেড়ি! কিন্তু কেন
কল্যাণ অধিকারী ও ব্যুরো
সিঙ্গুর স্বপ্ন দেখেছিল নতুন ভোরের। গ্রামের ছেলেরা কাজ করবে টাটার কারখানায়। তৈরি হবে গাড়ি। যা ছড়িয়ে পড়বে গোটা দেশে। কিন্তু সে স্বপ্ন, স্বপ্ন হয়েই থেকে গেছে। বাস্তবে রূপান্তরিত হয়নি। কারখানার জমি ফিরে পেয়েছেন কৃষকরা। কিন্তু জমিতে ফসল ফলাতে পারেননি বহু কৃষক। তাঁদের অভিযোগ ছিল জমি চাষের উপযোগী করে দেওয়া হয়নি। এবার সেই জমিতেই মাছের ভেড়ি তৈরি নিয়ে জল্পনা শুরু হয়েছে।
টাটাদের ন্যানো গাড়ি কারখানার জন্য জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছিল বাম আমলে। তারপর আন্দোলনের জেরে সেই জমি ছেড়ে গুজরাতে পাড়ি জমান রতন টাটা। সানন্দে গড়ে তোলেন গাড়ি কারখানা। আর সিঙ্গুর বহু আন্দোলনের তীর্থভূমিতে পরিণত ! কৃষকরা হাল কাঁধে জমিতে ফেরে। কিন্তু কারখানার জমি চাষযোগ্য না হওয়ায় ঠিকমতন ফসল ফলাতে পারেননি তাঁরা। অনিচ্ছুক কৃষকদের জন্য ‘মমতা’ দেখায় পরিবর্তনের সরকার। বর্তমানে আশা-নিরাশার দোলাচলে দুলছে কৃষকদের জীবন। কারখানাও হল না, অন্যদিকে জমির উর্বরা শক্তি হ্রাস পেয়েছে। ফলে মাথায় হাত পড়া কৃষকদের কয়েকজন মাছের ভেড়ি করতে চাইছে। যাতে করে সরকারি সাহায্য নিয়ে কিছুটা আর্থিক দুরবস্থা থেকে রক্ষা পেতে চাইছে।
একপক্ষের দাবি, শুধুমাত্র কৃষি দাবি তুলে আখেরে বাংলার যুব সমাজের পেটে আঘাত করা হয়েছে। টাটা চলে গিয়ে বাংলার শিল্প ব্যবস্থায় বড় আঘাত সৃষ্টি হয়েছে। যা সামলাতে সরকারকে শিল্প সম্মেলন করতে হচ্ছে। তারপরেও শিল্পের ভাটা। চাকরির হতাশা গ্রাস করছে যুব সমাজের মনে। কৃষকরা ভেড়ি করছে তা পরে অন্য কাজে ব্যবহৃত হবে। জোতদারদের হাতে চলে যাবে ওই জমি! অপরপক্ষের জবাব, সিঙ্গুরের জমি সরকার বদলে দিয়েছে! একি সঙ্গে দেশজুড়ে কৃষকদের আওয়াজ মজবুত করেছে সিঙ্গুর। সরকার বা প্রতিষ্ঠান চাইলেই জোর করে কৃষকের জমি কেড়ে নিতে পারেন না। তা প্রমাণ করেছে সিঙ্গুরের মানুষ। তিন ফসলি সোনার জমি কৃষকদের সম্মান। ওঁদের রুজিরুটি।
সেদিনের কৃষি আন্দোলনের নেতা বেচারাম মান্না এখন মন্ত্রী। তাঁর স্ত্রী করবী মান্না স্বামীর ছেড়ে আসা হরিপাল বিধানসভা নতুন বিধায়ক হয়েছেন। মন্ত্রীর দাবি এসব লোক হাসানো প্রলাপ বকছে বিরোধীরা। সিঙ্গুরের মানুষ সব দেখছেন। বাকি জনপ্রতিনিধিরা নেমে পড়েছেন যে কোনভাবে সিঙ্গুরের কথা তুলে ধরতে। সরকারের ফিরিয়ে দেওয়া জমিতে চাষের বদলে মাছের ভেড়ি!