হাওড়ায় ঝড়ের বেগ পৌঁছাতে পারে ঘণ্টায় ৭০-৮০ কিমি, আশঙ্কার প্রহর গুনছে জেলার বাসিন্দারা
কল্যাণ অধিকারী
বুলবুল তারপর আমপান এবার ইয়াস আবারও ঘূর্ণিঝড় ধেয়ে আসছে বাংলায়। ঝড়ের তাণ্ডবে বিপর্যস্ত হতে চলেছে হাওড়া জেলাও। ঝড়ের বেগ পৌঁছাতে পারে ঘণ্টায় ৭০-৮০ কিমি। তাতেই আতঙ্ক মাঝি মল্লার থেকে আম জনতা।
করোনা ও লকডাউনে নাভিশ্বাস, তার ওপর ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের ভ্রূকুটি। এই দুইয়ের জেরে গ্রামীণ হাওড়ার মানুষজন প্রহর গুনছে। ইতিমধ্যে মাছ ধরতে যাওয়া মাঝি মল্লাররা কার্যত গৃহবন্দি। রূপনারায়ণ, মুণ্ডেশ্বরী নদী ওঁদের জীবন জীবিকা। নদীতে মাছ ধরে বিক্রি করে যে টাকা আসে তাতেই জীবন চলে। কিন্তু একের পর এক তান্ডব চালানো ঘূর্ণিঝড় লণ্ডভণ্ড করে দেয় জীবন কে। নদীর পাড়ের ঘর ছেড়ে উঠে যেতে হয় স্কুলে। কটাদিন কাটিয়ে ফিরে এসে ঘর ভাঙা, গাছ উপড়ে পরার ছবি দেখতে হয়। কথা হচ্ছিল বাকসি এলাকার রাবিয়া, ইসমাইল, মনোজ, প্রদীপদের সঙ্গে।
ওঁরা জানান, দ্বীপাঞ্চল এলাকার মানুষদের সমস্যা প্রতিনিয়ত। বর্ষার সময় হুগলি থেকে ইলিশ-ঝাঁক আর ঢোকে না রূপনারায়ণে। ইলিশ বিক্রি করে উপার্জন থেকে সারা বছর সংসার চালাতেন মাঝিরা তাও বন্ধ। তার ওপর পূর্ণিমার ভরা কোটালের জোয়ারে তো রয়েছেই। কৃষিজ ফসল নষ্ট হয়ে যায়। আমপান ঝড়ে তো বহু ক্ষতি হয় গ্রামের। সেই ক্ষতি এখনও পুরো হয়নি। ছাউনির টিন কিনতেই পনেরো হাজার টাকা খরচ হয়। বাঁশ সহ অন্যান্য খরচ হয়ে যায় চল্লিশ হাজার টাকা। কুড়ি হাজার টাকা অনুদান মিলেছিল। আবার এক ঘূর্ণিঝড়ের সম্মুখীন।
আমতা-২ ব্লক সমষ্টি উন্নয়ন আধিকারিক মাসুদুর রহমান জানালেন, “ডিএম ম্যাডামের নির্দেশ মেনে কাজ করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে প্রশাসনিক স্তরে মিটিং অনুষ্ঠিত হয়েছে। বিপর্যয় মোকাবিলা দফতর কে জানানো হয়েছে। আমতা-২ ব্লকের সমস্ত পঞ্চায়েত টু পঞ্চায়েত তথ্য আদানপ্রদান চলছে। কখন ঝড় আসবে, গতিবেগ ঘন্টায় কত থাকবে সমস্ত তথ্য দেওয়া হচ্ছে। দ্বীপাঞ্চলে নিচু এলাকায় বসবাস করা মানুষদের জন্য হাইস্কুলে থাকার মতন ব্যবস্থা করা হচ্ছে। সব মিলিয়ে ইয়াস নিয়ে অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে এলাকার মানুষদের সুরক্ষার বিষয়টি দেখা হচ্ছে।”
গ্রামীণ এলাকা ছাড়াও শহর এলাকাতেও ক্ষতি হয়েছিল আমপানে। ইছাপুর থেকে বেলেপোলের দিকে এগোলেই রতন মন্ডলের চায়ের দোকান। আমপান ঘূর্নিঝড়ে উড়ে গিয়েছিল চায়ের দোকানের চাল। তারপর থেকে রতন কারখানার শ্রমিকের কাজ করছে। একি অবস্থা জগদিশপুরের অমর সিংয়ের। গাছের ডাল পরে আহত হয়েছিল। মাথায় সিটি স্ক্যান সহ চিকিৎসা খরচ হয়েছিল আট হাজার টাকা। এখন রং মিস্ত্রির কাজ করে সংসার চালান। এবার ধেয়ে আসছে ইয়াস। আবহাওয়া দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, হাওড়া জেলা দিয়ে ৭০-৮০ কিমি বেগে ঝড় সঙ্গে অতি ভারি বৃষ্টির সম্ভাবনা। আরও এক দুর্যোগের সম্মুখে জেলার বাসিন্দারা।