উচ্চ মাধ্যমিকে জেলার জয়জয়কার প্রথম দশে ৭২ পরীক্ষার্থী,
প্রথম বর্ধমান, দ্বিতীয় কোচবিহার, তৃতীয় আরামবাগ, চতুর্থ বাঁকুড়া
কল্যাণ অধিকারী এডিটর রাজন্যা নিউজ
সল্টলেকে বিদ্যাসাগর ভবনে আনুষ্ঠানিকভাবে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার ফল ঘোষণা হল বুধবার। বাড়ল পাশের হার। মেধা তালিকায় প্রথম ১০ জনের মধ্যে ৭২ জন মেধাবী। প্রথম হয়েছেন রূপায়ণ পাল, বর্ধমান সি এম এস হাই স্কুলের পড়ুয়া প্রাপ্ত নম্বর ৪৯৭, দ্বিতীয় বক্সিরহাট উচ্চতর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের তুষার দেবনাথ প্রাপ্ত নম্বর ৪৯৬, তৃতীয় রাজর্ষি অধিকারী প্রাপ্ত নম্বর ৪৯৫ আরামবাগ হাই স্কুল থেকে উচ্চ মাধ্যমিক দিয়েছিল। চতুর্থ হয়েছেন সোনামুখী গার্লস হাই স্কুলের সৃজিতা ঘোষাল প্রাপ্ত নম্বর ৪৯৪। সৃজিতা মেয়েদের মধ্যে প্রথম স্থান অধিকার করেছে।
উচ্চ মাধ্যমিকে পঞ্চম হয়েছেন ৬জন পরীক্ষার্থী, প্রাপ্ত নম্বর ৪৯৩, ষষ্ঠ হয়েছেন ৮ পড়ুয়া, প্রাপ্ত নম্বর ৪৯২, উচ্চ মাধ্যমিকে সপ্তম হয়েছেন ১১ পরীক্ষার্থী, প্রাপ্ত নম্বর ৪৯১। অষ্টম হয়েছেন ১৬ পড়ুয়া, তাঁদের প্রাপ্ত নম্বর ৪৯০। নবম হয়েছেন ১৭ পরীক্ষার্থী। তাঁদের প্রাপ্ত নম্বর ৪৮৯। উচ্চ মাধ্যমিকে দশম হয়েছেন ১০ পড়ুয়া, তাঁদের প্রাপ্ত নম্বর ৪৮৮। এ বছর ৫০ দিনের মাথায় প্রকাশিত হল উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার ফল। মেধাতালিকায় সবাইকে টেক্কা দিয়েছে হুগলি জেলা। প্রথম দশে হুগলি জেলার ১৪ জন পড়ুয়া। তবে পাশের হারে প্রথম স্থানে পূর্ব মেদিনীপুর জেলা। পাশের হার ৯৫.৭৪ শতাংশ। ছেলেদের চেয়ে উচ্চমাধ্যমিকে বাজিমাত মেয়েদের। পর্ষদের দাবি মেয়েদের সাফল্যের পিছনে বড় ভূমিকা রয়েছে কন্যাশ্রীর।
প্রথম স্থান করা বর্ধমান সিএমএস হাই স্কুলের মেধাবী রূপায়ণ পাল দিন দর্পণকে জানান, বই পড়তে ভালোলাগে। বাবা-মা শিক্ষক হওয়ায় প্রতিটি মুহুর্তে সাহায্য মিলেছে। একিসঙ্গে গৃহশিক্ষক ছিল যাঁদের চেষ্টা ও স্কুলের শিক্ষকদের সাহায্যে সাফল্য মিলেছে। ভবিষ্যতে চিকিৎসক হতে চায়। পরিবারের কথায়, ওঁর পড়াশোনা করাটা নেশা। স্কুলের পাঠ্যবই শুধু নয়, প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার জন্য বই পড়তো। সময় পেলে খেলা দেখাটাও ইচ্ছের মধ্যে থাকতো। উচ্চ মাধ্যমিকে দ্বিতীয় হয়েছেন তুষার দেবনাথ! কোচবিহার জেলার বক্সিরহাট উচ্চতর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের পরীক্ষার্থী। বাবা একজন সবজি বিক্রেতা। টিনের ছাউনি ঘরে আলো এনেছেন তুষার। অভাব-অনটন সঙ্গে থাকলেও স্বপ্ন দেখতো ভালো রেজাল্ট করে বেঙ্গালুরুর ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ সায়েন্স-এ পড়ার। ছেলে রেজাল্ট দুর্দান্ত করেছে। কিন্তু কীভাবে আগামীদিনে পড়াশোনা এগিয়ে নিয়ে যাবে দুশ্চিন্তার ছাপ পরিবারের কপালে।
উচ্চ মাধ্যমিকে তৃতীয় রাজর্ষি অধিকারী। আরামবাগ হাই স্কুলের ছাত্র রাজর্ষির কথায়, রেজাল্ট ভালো হবে আশা করেছিলাম কিন্তু তৃতীয় যে হব, এমনটা ভাবতেই পারিনি। টিভিতে রেজাল্ট ঘোষণা হচ্ছিল ছেলের পাশেই ছিলেন বাবা-মা। ছেলের নাম শুনে চোখে জল আটকাতে পারেনি। মা জয়ন্তী ডালি বলেন, ছেলে ডাক্তারি পড়ুক যত কষ্টই হোক আমরা পড়াব। আমরা চাই ছেলে সমাজের জন্য মঙ্গলময় কাজ করুক।
উচ্চ মাধ্যমিকের মেধাতালিকায় চতুর্থ সৃজিতা ঘোষাল। বাঁকুড়ার সোনামুখী গার্লস হাই স্কুলের পড়ুয়া। সৃজিতার প্রাপ্ত নম্বর ৪৯৪। শতাংশের হিসাবে ৯৮ দশমিক ৮। মেয়ের সাফল্যে গর্বিত বাবা। মেয়েকে বড় করেছেন তিনি। ক্যান্সারের সঙ্গে লড়াই করতে-করতে ওর মায়ের মৃত্যু হয়। সৃজিতার বয়স তখন সবে ৬। মেয়ের অধ্যবসায় ও সংগ্রামের কারণে নিজেকে সাফল্যের বাঁধনে বাঁধতে পেরেছে। সৃজিতার এই সাফল্যে গ্রামের মানুষজন বাড়িতে ভিড় করেছেন যা দেখে আপ্লুত। সৃজিতার কথায়, ভেবেছিলাম রেজাল্ট ঠিকঠাক হবে। তবে রাজ্যে মেয়েদের মধ্যে প্রথম হব এটা কখনো আশা করিনি। সবাই বাড়িতে আসছেন ফোনে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানাচ্ছে, অবশ্যই ভালো লাগছে।