মানুষের কাজ করব, মানুষ যেটা বলবে সেটাই আমি শুনব, পাঁচলা থেকে কেন্দ্রকে হুঙ্কার মমতার

কল্যাণ অধিকারী, এডিটর রাজন্যা নিউজ

পাঁচলায় প্রশাসনিক সভামঞ্চে দীর্ঘ পঞ্চাশ মিনিটের বক্তব্যে বাংলার প্রাপ্য টাকার জন্য কেন্দ্রকে কখনো হুঙ্কার দিলেন, কখনো আক্ষেপের সুরে বলেন আবাস যোজনা বাংলার বাড়ি প্রকল্প বন্ধ করে দিয়েছে পয়সা দেয় না। ১১ লক্ষ লোকের বাড়ির টাকা পড়ে রয়েছে। এরপরে তিনি বলেন গ্রামীণ ভাঙাচোরা রাস্তার জন্য কেন্দ্র টাকা দিচ্ছে না। সারাইয়ের জন্য ২হাজার কোটি টাকার ব্যবস্থা করছেন তিনি। রাজ্যে পঞ্চায়েত ভোট শিয়রে। পাঁচলার মাটি থেকে গ্রাম বাংলার মা মাটি মানুষের জন্য কাজ করে যাবার প্রতিশ্রুতি দিয়ে গেলেন মমতা।

এদিন পাঁচলায় সরকারি মঞ্চে বক্তব্য রাখতে গিয়ে মমতা শুরুতেই হাতজোড় করে বলেন, “আমার প্রিয় মা ভাই ও বোনেরা।” পাঁচলার মাটিতে হাজার-হাজার জনতা তখন হাততালি দিয়ে প্রতিনমস্কার ফিরিয়ে দিলেন। মুখ্যমন্ত্রী আসবার ঘন্টা খানেক আগেই মাঠে তিল ধারণের জায়গা ছিল না। সভাস্থলে ছিল ত্রিস্তরীয় নিরপত্তা বলয়। ভিভিআইপি গেটের সামনে সাদা পোশাকের পুলিশের নজরদারি। পাশেই খাকি পোশাক। মেটাল ডিরেক্টর টিম। জাতীয় সড়কে যান চলাচলও নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছিল। বারোটার কিছু পরেই সভামঞ্চে ওঠেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি মঞ্চে উঠতেই উচ্ছ্বাসে ফেটে পড়ল নেতাজী সংঘের ময়দানে ভর্তি জনতা। সভায় ভিড় দেখে স্বস্তির হাসি তখন মঞ্চে থাকা তৃণমূল সাংসদ-মন্ত্রী ও বিধায়কদের চোখে মুখে।

বৃহস্পতিবার পাঁচলার সভামঞ্চ থেকে রিমোট টিপে দুই দফায় রাজ্যের বিভিন্ন জেলার প্রায় তিন হাজার কোটি টাকার প্রকল্পের সূচনা ও উদ্বোধন করেন মুখ্যমন্ত্রী। বক্তব্য রাখতে গিয়ে একটি বারের জন্য তৃণমূল, বিজেপি ও বাম-কংগ্রেসের নেতাদের নাম মুখে নেননি। তিনি পরে বলেন, এটা সরকারি মঞ্চ আমি সরকারের কথা বলতে এসেছি, রাজনীতির কথা নয়। বক্তব্যের প্রথম ত্রিশ মিনিট জুড়ে ছিল সরকারের কাজের প্রশস্তিতে ভরা। রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষের জন্য তাঁর সরকার কি কি করেছে তা তুলে ধরেন। সামনেই পঞ্চায়েত ভোট। এমনটা ভেবেই দুয়ারের সরকার সহ বিভিন্ন প্রকল্প রাজ্যের সর্বত্র চালুর সিদ্ধান্ত জানান। বক্তব্যের শেষ পনেরো মিনিট জুড়ে ছিল কেন্দ্রীয় বঞ্চনার অভিযোগ। গ্রাম-বাংলায় ১০০ দিনের কাজের টাকার প্রসঙ্গে বক্তব্য রাখেন মমতা। তিনি বলেন, সাত হাজার কোটি টাকা আমরা কেন্দ্রের কাছ থেকে পাই। গরিব লোকের টাকা মারবেন না, গরিব লোকেদের টাকা দিন। জিএসটির প্রাপ্য টাকা দিচ্ছে না বলেও ফুঁসে উঠলেন। জিএসটির টাকা রাজ্যের প্রাপ্য, এটা কারও দয়ার টাকা নয়। সেটাও আটকে রেখেছে কেন্দ্র।  

উত্তরবঙ্গকে আলাদা রাজ্য হিসাবে ঘোষণা করা হোক, দাবিতে সরব আলিপুরদুয়ারের বিজেপি সাংসদ। এদিন বক্তব্যে মমতা বলেন, কারোর সাথে কোন ভাগাভাগি নয়। বাংলা ভাগ আমরা করতে দেব না। দাঙ্গাকারীদের আমরা মদত দেব না। দেশটাকে ভালো রাখতে হবে। যাদের কাজ নেই কর্ম নেই সকাল থেকে উঠে টেলিভিশনের সামনে বসে পড়ে। এত কাজ হচ্ছে দেখাচ্ছে না। একটা টিকটিক পড়ে গেলে সারাদিন চলছে তো চলছে। কেন্দ্রীয় সরকারের পার্টিটা বলে দিয়েছে, বিজেপি যা বলবে তোমাকে তাই শুনতে হবে, নইলে তোমার চ্যানেলকে কেটে দেওয়া হবে। দিল্লি থেকে অনেক চ্যানেল এসছে সারাক্ষণ শুধু বসে বসে আমাদের বিরুদ্ধে বলে যায়। আমি বলে দিয়েছি তোমরা যা ইচ্ছে বলে যাও, আমার কিচ্ছু যায় আসে না। আমি মানুষের কাজ করব, মানুষ যেটা বলবে আমি সেটাই শুনব পাঁচলা থেকে হুঙ্কার মমতার।নবান্ন থেকে কয়েক কিমি দূরে সাঁতরাগাছির কাছে নতুন ৫০ ফুটের নবনির্মিত সেতু ও সেতু সংলগ্ন চার লেনের রাস্তার উদ্বোধন করেন মুখ্যমন্ত্রী। এরপর তিনি আমতা বিধানসভার কুলিয়া ব্রিজ নির্মাণ করার কথাও বলেন। তিনি বলেন, ২৫কোটি টাকা ব্যায়ে কংক্রিটের ব্রিজ নির্মাণ করতে চলেছি। ট্রেন্ডার হয়ে গেছে। এরফলে এখানকার মানুষের উপকার হবে।   

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *