হাওড়ায় অগ্রাধিকার পেল শিল্প, কর্মসংস্থান হবে লক্ষাধিক, ধমক খেলেন বিধায়ক

কল্যাণ অধিকারী এডিটর রাজন্যা নিউজ

✦ কর্মসংস্থান ১ লক্ষ ১৬ হাজার
✦ নতুন ফায়ার স্টেশন
✦ ১০০ শয্যার আইসোলেশন ওয়ার্ড
✦ ৫১২ আউটলেটের মাধ্যমে ‘বাংলা ডেয়ারি’ প্রকল্প
✦ দ্বিতীয় দফায় প্রস্তাবিত ৫৪ লক্ষ ‘বাংলার বাড়ি’

পুরভোটের আগে হাওড়ার শরৎ সদনে প্রশাসনিক বৈঠকে অগ্রাধিকার পেল শিল্প। পাশাপাশি পঞ্চায়েত ব্যবস্থা ও রাজ্যের ‘বাংলার বাড়ি’ প্রকল্প নিয়ে একগুচ্ছ প্রস্তাব রাখলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি জানান, আমার টার্গেট শিল্প। আগামী দু’বছরে প্রায় ৮০০-র বেশি সংস্থা হাওড়ায় খুলবে তাদের সংস্থা। বিনিয়োগের পরিমাণ ১০ হাজার ৪৮০ কোটি টাকা। এর দ্বারা কর্মসংস্থান হবে ১ লক্ষ ১৬ হাজার। আগামী ৫ বছরের মধ্যে হাওড়া শিল্প পার্কের কাজ শেষ হবে। দ্বিতীয় দফায় প্রস্তাবিত ৫৪ লক্ষ ‘বাংলার বাড়ি’। ৫১২ আউটলেটের মাধ্যমে ‘বাংলা ডেয়ারি’ প্রকল্প চালু হবে। নতুন ফায়ার স্টেশনের কথা ঘোষণা করেন তিনি। ১০০ দিনের কাজের টাকা যাতে সকলে পান সেদিকে নজর দিতে হবে জানান মুখ্যমন্ত্রী।  

নতুন বছর শুরুর মাস দুয়েকের মধ্যেই রাজ্যে হতে চলেছে শিল্প সম্মেলন। তিনি শিল্প গড়তে প্রস্তুতি নিয়েই শিল্প সম্মেলন করতে চাইছেন তা প্রশাসনিক বৈঠকে বুঝিয়ে দিয়েছেন। বৈঠকে বারেবারে উঠে এসেছে শিল্পের কথা। ক্লাস্টারে শাটল কক শিল্প নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে উলুবেড়িয়ার চেম্বার অফ কমার্সের এক প্রতিনিধি প্রস্তাব রাখেন। উলুবেড়িয়ার শাটল ককের নাম দেশজুড়ে। কিন্তু হাঁসের পালকের বন্দোবস্ত করা হয় তাহলে অনেকটাই এগিয়ে যাবে। বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে শোনেন তিনি। হাঁসের এক ধরণের পালক প্রয়োজন হয় শাটল কক তৈরির জন্য। প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে সংশ্লিষ্ট আধিকারিকদের নির্দেশ দেন মমতা। ১৬নং জাতীয় সড়ক সংলগ্ন এলাকায় ছোট ও মাঝারি শিল্পাঞ্চল বাড়ছে। এই প্রসঙ্গে বক্তব্য রাখতে গিয়ে একটি ফায়ার স্টেশনের প্রস্তাব রাখা হয়। মমতা জানান, সেন্টার এলাকায় নতুন ফায়ার স্টেশনের কথা ঘোষণা করেন তিনি। এরপর কাশফুল নিয়ে একটি অভিনব প্রস্তাব রাখেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, এই যে কাশফুল হয় বাংলায়। একমাস থাকে। কীভাবে কাশফুল সংরক্ষণ করা যায়, তা নিয়ে গবেষণা করে দেখা যেতে পারে। তারপর কাশফুল থেকে বালিশ এবং বালাপোশ তৈরি করা যেতে পারে। তোমরা কাশফুলটা কীভাবে ব্যবহার করতে পার, দেখ তো।

রাজ্যের পাশাপাশি জেলায় কি ঘটছে সমস্তটা নজরে রাখেন স্পষ্ট ধরা পড়ল তাঁর বক্তব্যে। বৈঠকের মাঝে দিদি সম্বোধন করে বক্তব্য দিতে ওঠেন উত্তর হাওড়ার বিধায়ক গৌতম চৌধুরী। তাঁকে থামিয়ে দিয়ে বলেন, ‘গৌতম তুমি রাস্তায় বসে গিয়েছিলে কেন ? স্বভাবতই অস্বস্তি ধরা পড়ে গৌতমের চোখেমুখে। আমতা-আমতা করে কিছু বলার চেষ্টা করলেও ধমকের সুরে মমতা বলেন, ‘টিভিতে একদিন দেখাবে। কাজ করো, সমন্বয় রাখো। হাওড়ার জল জমা সমস্যা বহু পুরনো। তিন ফ্রেজে শর্ট, মিডিয়াম এবং লং ফেজে কাজ হচ্ছে। এরপর তাঁর কাছে প্রস্তাব আসে মৎস্যজীবীদের কথা। মৎস্য দফতরের অতিরিক্ত মুখ্যসচিব অত্রি ভট্টাচার্য জানান, মৎস্যজীবীরা ক্রেডিট কার্ড পাচ্ছে না। বিষয়টিকে নিয়ে বৈঠকে তিনি বলেন ‘এবার থেকে মৎস্যজীবীদের জন্য ‘ক্রেডিট কার্ড’ দেওয়া হবে’। নয়াচরে মৎস্য হাব গড়তে হবে।মৎস্যজীবীদের জন্য ঘর বানানোর কথাও বলেন। অত্রি ভট্টাচার্য জানান, ২৪ তারিখ একটি টিম যাচ্ছি নয়াচর। সমস্তটা দেখে বিস্তারিত রিপোর্ট জমা দেওয়া হবে। 
এদিন বৈঠকের শুরুতেই জেলার স্বাস্থ্য ব্যবস্থা নিয়ে বড় ঘোষণা ছিল মুখ্যমন্ত্রীর মুখে। তিনি জানান, ১০০ শয্যার আইসোলেশন ওয়ার্ড তৈরি করা হবে সত্যবালা আইডি হাসপাতালে। জেলায় সুস্বাস্থ্য কেন্দ্র তৈরি হবে ৬০টি। বৈঠকের মাঝেই তিনি বলেন, ‘জেলায় শিল্প স্থাপনে যাতে কোনও সমস্যা না হয়ে তা সরকারের সমস্ত দফতরকে দেখতে হবে। নতুন পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী হয়েছেন পুলক রায়। তাঁর হাতে রয়েছে জনস্বাস্থ্য ও কারিগরি বিভাগের মন্ত্রী। পুলকের নাম ধরে তিনি বলেন, পুলক দুটি দফতর ঠিকঠাক কাজ করে চলো। বৈঠক থেকেই অসুস্থ রাজ্যের সমবায় মন্ত্রী অরূপ রায়ের খোঁজ নেন। ভার্চুয়াল বৈঠকে অরূপ রায় উপস্থিত থাকায় তাঁকে বিশ্রাম নেবার কথা বলেন। প্রশাসনিক বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন জেলার বিধায়ক এবং মন্ত্রীরা। ছিলেন রাজ্যের প্রথম সারির সরকারি আধিকারিক এবং আমলারা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *