রাজীব-শুভেন্দু ও মুকুলকে তীব্র ভাষায় আক্রমণ কুনালের বাদ গেলেন না রাজ্যপাল
কল্যাণ অধিকারী রায়দীঘি
হাইলাইটস
❏ আমি লড়াই করছি কোর্টে আর আপনি লাল বাতি গাড়িতে ঘুরে এখন বিজেপিতে যাওয়া হচ্ছে
❏ চিঠি দিয়েছি মুকুল রায় আর শুভেন্দু অধিকারীকে অবিলম্বে গ্রেফতার করে হেফাজতে নিয়ে জেরা করতে হবে
❏ তৃণমূলকে শুষে খাবার পর এখন তোমাদের মুখে নীতিকথা, তোমরা বিশ্বাসঘাতক
শনিবার দুপুরে দক্ষিণ ২৪ পরগণার রায়দীঘিতে তৃণমূলের জনসভায় আসেন তৃণমূল মুখপাত্র কুণাল ঘোষ। ওই সভা মঞ্চ থেকে এক সুরে রাজীব-শুভেন্দু-মুকুলকে তীব্র আক্রমণ শানালেন তিনি। দর্শকদের ঠাসা ভিড়ে মানুষের থিকথিকে ভিড়। মঞ্চ থেকে বলেন, অমিত শাহকে চিঠি দিয়েছি, আমিও কোর্টে শেষ দেখে ছাড়ব। কাজ করার সুযোগ না থাকে সেদিন কেন ছেড়ে যাওনি শুভেন্দু ও রাজীব। চিঠি দিয়েছি দল বদলে যেন রেহাই না পায় মুকুল রায়, শুভেন্দু অধিকারী।
এরপরেই রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় কে নিশানা করে তিনি বলেন, গোটা তৃণমূল পরিবারে সব থেকে বেশি যদি নির্যাতিত ও অত্যাচারিত কেউ থাকে সে কুনাল ঘোষ। আজ আপনাদের সামনে দাঁড়িয়ে আছে। আমার বিরুদ্ধে যারা ষড়যন্ত্র করেছে তারা বিজেপিতে পালিয়ে গিয়ে বসে আছে। তখন আমি প্রেসিডেন্সি জেলে বন্দি আছি। আমি লড়াই করছি কোর্টে। সেই সময় কারামন্ত্রী জেল ভিজিটে এলেন। আমি কুনাল ঘোষ পার্লামেন্টের সদস্য আমি জেলে বন্দি। আমি দাঁড়িয়ে। আমার সামনে এসে যিনি কথা বলছেন তিনি কারামন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়। বন্ধু রাজীব, ওই ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে লড়ার পর, জীবন ধবংস করার পর আজকে যদি আনুগত্যের প্রমাণ দিয়ে আমি তৃণমূল কংগ্রেসের মঞ্চে দাঁড়িয়ে থাকতে পারছি। আর লাল আলো জ্বালিয়ে তুমি জেলে এসেছিলে আজকে তুমি বিজেপির মঞ্চে দাঁড়াচ্ছ। একে বলে বিশ্বাসঘাতকতা। তুমি মন্ত্রী ছিলে। কাজ করার সুযোগ না থাকে কেন সেদিন ছেড়ে দিলে না। শুভেন্দু অধিকারী, রাজীব ব্যানার্জি বলুন।
তিনি আরও বলেন আমি অমিত শাহকে চিঠি দিয়েছি, আমিও কোর্টে শেষ দেখে ছাড়ব। কাজ করার সুযোগ না থাকে সেদিন কেন ছেড়ে দাওনি শুভেন্দু ও রাজীব। মুকুল রায়, শুভেন্দু অধিকারী দল বদলে যেন রেহাই না পায়। অমিত শাহকে চিঠি দিয়েছি, সিবিআই ডিরেক্টরকে চিঠি দিয়েছি। মুকুল রায় আর শুভেন্দু অধিকারীকে অবিলম্বে গ্রেফতার করে হেফাজতে নিয়ে জেরা করতে হবে। তাদের হাতে সারদার খবর আছে, আলকেমিস্ট-এর খবর আছে। সমস্ত রকম চিটফান্ডের খবর মুকুল রায়ের কাছে আছে। মুকুল রায়কে কলার ধরে জেলের মধ্যে রেখে তারপর তদন্ত এগোবে।
এরপরে তিনি বলেন, আমরা সফট টার্গেট। তখন তোমরা মধু খেয়ে ঘুটি সাজিয়েছ। তারপরে তোমরা বিজেপিতে গিয়ে তদন্ত এড়াবে? মুকুল রায় তুমি ছক সাজানোর চেষ্টা করছ। তুমি সাক্ষী? তুমি সিবিআই ম্যানেজ করে! বিজেপি ম্যানেজ করে! তুমি সাক্ষী হতে পারো! ৩১৯ ধারা জারি করে তোমায় যদি কাঠগড়ায় না তুলেছি আমার নাম কুনাল ঘোষ নয়। তৃণমূল চোর? তৃণমূল খারাপ? মনে রেখো তোমরা চোর। তোমরা দালাল। তোমরা বিশ্বাসঘাতক। তৃণমূলকে শুষে খাবার পর এখন তোমাদের মুখে নীতিকথা।
বক্তব্যের শেষের দিকে শুভেন্দুর প্রতি আক্রমণের ঝাঁজ বাড়ান। কুনাল বলেন, ২০০৯ সাল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রেল মন্ত্রী হচ্ছেন। ঠিক হয়েছে ৬জন রাষ্ট্রমন্ত্রী হবেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ৬ জনের মধ্যে শিশির অধিকারীর নাম রেখেছেন। কারণ সিনিয়র নেতা। শুভেন্দু দাবি করল তাকেও মন্ত্রী করতে হবে। দিদি বললেন তা কি করে হয়। শুভেন্দু বলল তাহলে দু’জনই হোক! এরপরেই বাবার শপথ বয়কট করে কলকাতায় ফিরে এসেছিল। ছেলে দিব্যেন্দুকে নিয়ে গিয়ে মুখ রক্ষা করেছিল শিশির অধিকারী। শুভেন্দু অধিকারী যে বাবাকে মন্ত্রী দেখতে চায় না, সে বাংলার ভালো চাইবে প্রশ্ন করেন কুনাল।
পূর্ব মেদিনীপুরে দু তিনটে সভা করেছি, দেখিছি। এবার পূর্ব মেদিনীপুরে ১৬ টা আসনে ১৬ টাতে তৃণমূলকে জিতিয়ে প্রমাণ দেব, গদ্দারদের কোন জায়গা পূর্ব মেদিনীপুরের মাটিতে নেই। টিভিতে যা দেখাচ্ছে, কাগছে যা দেখাচ্ছে বিশ্বাস করবেন না। লোকসভা ভোট আলাদা। বিধানসভার ভোট আলাদা। লোকসভার ভোটে কংগ্রেস শক্তিশালী নয় তাই তাঁরা আসতে পারেনি। বিজেপি কোন না কোন সুবিধা পেয়েছে। আপনাদের যদি ১৮টা এমপি থাকে। তাহলে বাংলাকে কোন চোখে দেখে নরেন্দ্র মোদীর সরকার। একটা পূর্ণ মন্ত্রী পশ্চিমবঙ্গে দেয়নি। হাফপ্যান্ট পরা মন্ত্রী করে রেখে দিয়েছে এখানকার এমপি দের। বাংলাকে ওঁরা ঠিক নজরে দেখে না। বাংলার ভালো ওঁরা চায় না। বাংলার বকেয়া টাকা দিচ্ছে না। জিএসটির বকেয়া টাকা দিচ্ছে না। তারমধ্যে দাঁড়িয়ে কাজ করে যাচ্ছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কই এ নিয়ে গদ্দারদের মুখে কোন কথা নেই। দীলিপ ঘোষের মুখে সেসব কথা নেই। বিজেপির এমপি দের মুখে সেসব কথা নেই।
এরপরেই রাজ্যপাল কে নিশানা করে বলেন, জগদীপ ধনখর দিন ক্ষণ ঠিক করে রাখুন। রাজভবনের গেটে গোলাপ ফুল হাতে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে থাকতে হবে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কে স্বাগত জানানোর জন্য। যেদিন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শপথ নেওয়ার জন্য আপনার রাজভবনে আসবেন সেদিন দেখব গদ্দাররা কোথায় থাকে! মাঠ জুড়ে দর্শকদের মধ্যে তখন প্রবল হাততালি।