লালচাঁদের বাঁশের সেতু কংক্রিটে রূপ দিচ্ছেন মমতা

কল্যাণ অধিকারী, হাওড়া

হাইলাইটস
কুলিয়া সেতু নির্মাণে অর্থ বরাদ্দ
দ্বীপ এলাকার যোগাযোগ ও অর্থনৈতিক উন্নতি হবে জানান, সুকান্ত পাল
ভোটের আগেই সেতু নির্মাণে টাকা বরাদ্দ হয়েছে শুনে খুশি বাসিন্দারা

লালচাঁদের হাতে গড়া বাঁশের সেতু এবার কংক্রিটে রূপ নিতে চলেছে। জেলার সঙ্গে যুক্ত হবে দ্বীপাঞ্চল! খুশি ফুটেছে স্থানীয় বাসিন্দা থেকে ব্যবসায়ী প্রত্যেকের মুখে। যে মানুষটি হাজারও মানুষের সুবিধার কথা ভেবে বাঁশের সেতু বানিয়েছিল দেখতে পেলেন না তিনিই। পাঁচ বছর আগে খুন হতে হয় তৃণমূল কর্মী শেখ লালচাঁদ ও তাঁর ভাই শেখ শাজাহানকে।

হাওড়া জেলার শেষ প্রান্ত দ্বীপাঞ্চল। একদিকে বয়ে গিয়েছে মুণ্ডেশ্বরী নদী। অপরদিকে ঘিরে রেখেছে রূপনারায়ণ। স্কুল পড়ুয়া থেকে সাধারণ মানুষ কর্মসূত্রে হোক বা চিকিৎসা পরিষেবা পেতে নদী পেরিয়ে তবেই যেতে হয় হাওড়া, হুগলী বা পূর্ব মেদিনীপুর। বর্ষায় নদীর জল নিয়ম করে ঢুকে যায় গ্রামে। জমির ফসল থেকে পথ ঘাট জল থৈথৈ। নদী ঘিরে থাকায় অসামাজিক কাজ করে পুলিশ আসার আগে সহজেই পালিয়ে যায় দুষ্কৃতিরা। তার উপর রয়েছে জোয়ার-ভাটা। সমস্যায় জেরবার দ্বীপাঞ্চলের মানুষ। এগিয়ে আসেন গ্রামের বাসিন্দা তথা তৃণমূল নেতা শেখ লালচাঁদ।

২০১৭ সাল ফেব্রুয়ারি মাস। লালচাঁদের খোঁজ খবর নিতে পৌঁছে যাই কুলিয়া ঘাট। চোখের সামনে মুণ্ডেশ্বরী নদী। মূল ভূখন্ডের সঙ্গে একমাত্র যোগাযোগ রক্ষাকারী বাঁশের পাটাতন করা সেতু। বাইক টেনে টেনে ওপাড়ে পৌঁছাই। বাঁশের ছোট্ট ঘরে বসে মধ্যবয়সী এক ব্যক্তি। পারাপারের জন্য খুচরো পয়সা নিচ্ছেন। লালচাঁদের খোঁজ করতেই বললেন শহর থেকে ফিরছেন। পরিবর্তনের সরকারের প্রথম কিস্তি সম্পূর্ণ। চলছে দ্বিতীয় অধ্যায়। এলাকায় ঢালাই রাস্তার কাজ অনেকটাই হয়েছে। গ্রাম ঘুরে ফিরে এসে লালচাঁদের মুখে এরপর শুনতে থাকি বাঁশের সেতু তৈরির কাহিনী।

লালচাঁদ জানান, ‘জীবিকা নির্বাহ করতে নৌকা চালানোই একমাত্র পেশা। সে কাজ করতে পরিশ্রম বিস্তর। ২০১০ সাল অবধি রূপনারায়ণ ও মুণ্ডেশ্বরী দুই নদীর স্রোত ছিল প্রচুর। ভাটার সময় দাঁড় টেনে আসতে সমস্যা হত বেশি। গ্রামবাসীরা ওপাড়ে যেতে নৌকার উপর ছিল নির্ভরশীল। গ্রামবাসীদের ভোগান্তির কথা ভেবে শুরু করি বাঁশের সেতু চিন্তাভাবনা। কয়েক বছর পর আবারও শুরু হয় সেতু নিয়ে পরিকল্পনা। কিন্তু হিসাব করে দেখতে গিয়ে দেখা যায় খরচ প্রায় ৬লক্ষ টাকা। নিজের টাকা, আত্মীয়-পরিজন এবং স্ত্রীর গয়না পর্যন্ত বন্ধক রেখে কাজ শেষ করি। ততক্ষণে খরচ হয়ে গিয়েছে সাত লক্ষ টাকারও বেশি। সব মিলিয়ে প্রায় ৩৩ দিন কাজ করতে হয়েছে। গ্রামবাসীদের বলা হয় হেঁটে যেতে ২টাকা, বাইকে ৫টাকা করে দিতে। সরকারের কাছে আবেদন জানিয়েছি কুলিয়া সেতু নির্মাণ করে দেওয়ার। পাকা সেতু হলে গাড়ি চলাচলে সুবিধা হবে। তবে যতদিন না হচ্ছে এভাবেই চলবে দ্বীপাঞ্চলের জীবনযাপন।

ওই বাঁশের সেতুর ইজারা নিয়েই গোলমালের সূত্রপাত। ২০১৭ সালের জুন মাসের ১৬ তারিখ সকালে প্রায় চল্লিশ জন দুষ্কৃতী বন্দুক সহ বিভিন্ন অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে হামলা চালায়। প্রকাশ্যে খুন হয় শেখ লালচাঁদ ও তাঁর দাদা শেখ শাজাহান। এরপর রূপনারায়ণ ও মুণ্ডেশ্বরী নদী দিয়ে সহস্র কিউসেক জল বয়ে গিয়েছে। দোরগোড়ায় একুশের বিধানসভা নির্বাচন। ভোট দেবার চিন্তাভাবনা শুরু হয়েছে তখনি দ্বীপাঞ্চলের বাসিন্দাদের কাছে সুখবর টি আসে। কুলিয়া সেতুর জন্য ২২ কোটি ৫৬ লক্ষ টাকা বরাদ্দ হয়েছে এমনটাই পূর্ত দফতর সূত্রে জানা গেছে।

সেতু তৈরির ঘোষণায় তাঁদের লড়াইয়ের ফসল দাবি করছে তৃণমূল। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জয়পুরে রাজনৈতিক সভা করতে আসার সময় জানানো হয়েছিল। পূর্ত দফতরেও নিয়মিত বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছে। যার ফলশ্রুতি হিসেবে দ্বীপাঞ্চলের ৬০হাজার বাসিন্দা পাচ্ছে কংক্রিটের সেতু। আমতা-২ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি সুকান্ত পাল জানান, ‘কুলিয়া সেতু তৈরীর জন্য ২২ কোটি ৫৬ লক্ষ টাকা মঞ্জুর করার জন্য আমতাবাসীর পক্ষ থেকে মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতি কৃতজ্ঞতা ও প্রণাম জানাই। সহঃ সভাপতি দেলোয়ার হোসেন মিদ্যা জানান, দ্বীপাঞ্চলের মানুষের কাছে বড় প্রাপ্তি। সেতু নির্মাণ এলাকার মানুষের যোগাযোগ গতি পাবে। পড়াশোনার জন্য জেলার অন্যত্র পৌঁছাবে সমস্তটাই মানবিক মুখ্যমন্ত্রীর জন্য সম্ভবপর হচ্ছে।

লালচাঁদ বেঁচে নেই। তাঁর স্বপ্ন বাস্তবে রূপ নিতে চলেছে। দ্বীপাঞ্চলের বাসিন্দারা পাচ্ছে নতুন সেতু। খুশি মহিলা থেকে যুব সম্প্রদায়। মুণ্ডেশ্বরী নদীর ওপর সেতু তৈরীর টেন্ডার এবার দ্রুত শুরু হোক।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *