মঙ্গলে মান্থা’র ল্যান্ডফল !২৩ জেলায় লাল সতর্কতা

রাজন্যা নিউজ ব্যুরো নয়াদিল্লি

দক্ষিণ-পশ্চিম বঙ্গোপসাগরের উপর সক্রিয় ঘূর্ণিঝড় ‘মান্থা’ দ্রুত উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হচ্ছে। ভারতীয় মৌসম বিভাগ জানিয়েছে, গত ছয় ঘন্টায় ঝড়টি ১৫ কিলোমিটার বেগে এগিয়েছে। সোমবার সকালে আবহাওয়া বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, ঝড়টি আগামী ১২ ঘন্টার মধ্যে দক্ষিণ-পশ্চিম এবং পশ্চিম-মধ্য বঙ্গোপসাগর জুড়ে উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হবে, তারপর উত্তর-উত্তর-পশ্চিম দিকে মোড় নেবে। ২৮ অক্টোবর সকালের মধ্যে এটি তীব্র ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এরপর ২৮ অক্টোবর সন্ধ্যা বা রাতে কাকিনাড়ার কাছে মছলিপত্তনম এবং কলিঙ্গপত্তনের মধ্যে দিয়ে অন্ধ্রপ্রদেশ উপকূল অতিক্রম করবে। এই সময়ের মধ্যে ঝড়ের গতিবেগ ৯০-১০০ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টা থেকে ১১০ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টায় বৃদ্ধি পেতে পারে, যা সমুদ্রে বড় ঢেউ এবং ব্যাপক ধ্বংসের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেবে। মৌসম ভবন অন্ধ্রপ্রদেশ এবং দক্ষিণ ওড়িশা উপকূলের ২৩টি জেলায় সতর্কতা জারি করেছে। অন্ধ্রপ্রদেশে, এসপিএসআর নেলোর, প্রকাশম, ভট্টাল, কৃষ্ণা, পশ্চিম গোদাবরী, পূর্ব গোদাবরী এবং বিজয়ওয়াড়ার মতো জেলাগুলিতে লাল এবং কমলা সতর্কতা জারি করা হয়েছে। ২৭ থেকে ২৯ অক্টোবর পর্যন্ত এই অঞ্চলগুলিতে ভারী বৃষ্টিপাত, ঝোড়ো বাতাস এবং বন্যার সম্ভাবনা রয়েছে। ওড়িশার কোরাপুট, মালকানগিরি, রায়গড়া, নবরঙ্গপুর, কালাহান্ডি, গঞ্জাম এবং গজপতি জেলাগুলিতেও লাল সতর্কতা জারি করা হয়েছে, যেখানে ২৮-২৯ অক্টোবর খুব ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। তামিলনাড়ুর উত্তরাঞ্চলে হালকা বৃষ্টিপাত এবং বজ্রপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। ইতিমধ্যে, অন্ধ্রপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী এন চন্দ্রবাবু নাইডুর প্রশাসন উচ্চ সতর্কতা জারি করেছে। বিদ্যুৎ, টেলিযোগাযোগ এবং পানীয় জল সরবরাহ নিশ্চিত করার জন্য মুখ্যমন্ত্রী প্রশাসনকে নির্দেশ দিয়েছেন। ওড়িশা সরকার ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা থেকে মানুষকে সরিয়ে নেওয়া শুরু করেছে এবং ১২৮টি দুর্যোগ মোকাবেলা দল মোতায়েন করেছে। ২৭ থেকে ২৯ অক্টোবর পর্যন্ত পুরী সমুদ্র সৈকতে স্নান নিষিদ্ধ করা হয়েছে। আগামী পাঁচ দিন জেলেদের সমুদ্র থেকে দূরে থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এদিকে ঘূর্ণিঝড় ‘মন্থা’র প্রভাবে জগদ্ধাত্রী পুজোয় বৃষ্টির আশঙ্কা রয়েছে বাংলায়। মঙ্গলবার থেকে শুক্রবার পর্যন্ত উত্তরবঙ্গ ও দক্ষিণবঙ্গে বিক্ষিপ্তভাবে ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। ঘনঘন বজ্রপাতও হতে পারে। উপকূল থেকে উত্তরের জেলায় জারি করা হয়েছে হলুদ সতর্কতা। ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে উপকূলে বইবে দমকা বাতাস, উত্তাল হবে সমুদ্র। এই সময়ে মৎস্যজীবীদের গভীর সমুদ্রে যেতে নিষেধ করা হয়েছে। অন্যদিকে, ফসলেরও বড় ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা করা হচ্ছে। বিশেষ করে উপকূলীয় অঞ্চলে পাকা ধান ও শীতকালীন ফসলের ক্ষতি হতে পারে ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে। কৃষকদের ক্ষেত থেকে পাকা ফসল কেটে ফেলার পরামর্শ দিয়েছে মৌসম ভবন। ঘূর্ণিঝড় মন্থার প্রভাবে পশ্চিমবঙ্গের বেশ কয়েকটি জেলায় ভারী বৃষ্টিপাত হতে পারে। উত্তরবঙ্গের দার্জিলিং, কালিম্পং এবং জলপাইগুড়িতে ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে, অন্যদিকে দক্ষিণবঙ্গে মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টিপাত হতে পারে। মৎস্যজীবীদের বৃহস্পতিবার পর্যন্ত সমুদ্রে না যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। মঙ্গলবার থেকে বৃহস্পতিবার বজ্রবিদ্যুৎ’সহ হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে কলকাতায়। বুধবার বা বৃহস্পতিবার বৃষ্টির পরিমাণ বাড়তে পারে। সঙ্গে ঘণ্টায় ৩০ থেকে ৪০ কিলোমিটার বেগে দমকা ঝোড়ো হাওয়া বইতে পারে।মঙ্গলবার দক্ষিণ ২৪ পরগনা ও পূর্ব মেদিনীপুরে ভারী বৃষ্টির সতর্কতা। বৃষ্টির সঙ্গে উপকূলের ও উপকূল সংলগ্ন জেলাগুলিতে ৩০ থেকে ৫০ কিলোমিটার গতিবেগে দমকা বাতাস বইতে পারে। উত্তর ও দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা, কলকাতা, হাওড়া, হুগলি, পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুর এবং ঝাড়গ্রাম জেলাতে ভারী বৃষ্টি হবে। বুধবার হাওড়া, উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা, পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুর এবং ঝাড়গ্রাম-এই ছয় জেলাতে ভারী বৃষ্টির সতর্কতা। সব জেলাতেই ৩০ থেকে ৪০ কিলোমিটার গতিবেগে দমকা বাতাস বইতে পারে। উপকূলে হাওয়ার গতিবেগ বাড়তে পারে। বৃহস্পতিবারেও ভারী বৃষ্টি হবে। পুরুলিয়া, বীরভূম, পূর্ব ও পশ্চিম বর্ধমান এবং মুর্শিদাবাদে বিক্ষিপ্তভাবে ভারী বৃষ্টির সতর্কতা। সব জেলাতেই ৩০ থেকে ৪০ কিলোমিটার গতিবেগে দমকা বাতাস বইতে পারে। শুক্রবারেও ভারী বৃষ্টি হবে বীরভূম এবং মুর্শিদাবাদে। হালকা বৃষ্টির সামান্য সম্ভাবনা দক্ষিণবঙ্গের জেলাগুলিতে। পূর্ব মেদিনীপুর, উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা, নদিয়া, পূর্ব ও পশ্চিম বর্ধমান, মুর্শিদাবাদ, বীরভূম জেলাতে বজ্রবিদ্যুৎ সহ হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টি এবং সঙ্গে ৩০ থেকে ৪০ কিলোমিটার গতিবেগে দমকা বাতাস বইতে পারে। শনিবার থেকে বৃষ্টির পরিমাণ কমবে, বিক্ষিপ্তভাবে দু’এক জায়গায় বজ্রবিদ্যুৎ বৃষ্টির পূর্বাভাস।
বৃহস্পতিবার ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে মালদা, উত্তর দিনাজপুর এবং জলপাইগুড়ি জেলাতে। বাকি জেলাতে বজ্রবিদ্যুৎ সহ হালকা মাঝারি বৃষ্টি হতে পারে। শুক্রবারে উত্তরবঙ্গের সব জেলাতেই ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা। দার্জিলিং, কালিম্পং, জলপাইগুড়ি, আলিপুরদুয়ার, কোচবিহার, মালদা এবং দুই দিনাজপুরে ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস। বজ্রবিদ্যুৎ সহ হালকা মাঝারি বৃষ্টির সঙ্গে ৩০ থেকে ৪০ কিলোমিটার গতিবেগে দমকা বাতাস বইবে। শনিবারে বজ্রবিদ্যুৎসহ হালকা মাঝারি বৃষ্টি বিক্ষিপ্তভাবে হতে পারে উত্তরবঙ্গের জেলাগুলিতে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *