প্রবল বৃষ্টিতে ঘরে হাঁটু জল, ৭৮-এর স্মৃতি ভয় ধরাচ্ছে প্রবীণদের
কল্যাণ অধিকারী, রাজন্যা নিউজ
৭৮-এর সে এক রাত দেখেছিলাম। প্রায় পাঁচ দশক পরে কলকাতায় আরও এক রাত দেখলাম। স্মৃতি হাতড়াতে শুরু করেছেন প্রবীণরা। এত বৃষ্টি যে হবে আবহাওয়া দপ্তর জানাল না কেন? ঘরের মেঝেতে এক হাঁটু জল। রাতটা যে কীভাবে কেটেছে বলে বোঝাতে পারব না। কলকাতার চারপাশের অবস্থা কী জানতে টিভি খুলতেই ভয়াবহ সব চিত্র দেখাচ্ছে। কোথাও বাসের ছাদ অবধি জল। তারপর শুনলাম বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে কয়েকজনের মৃত্যুর খবর।
সোমবার রাতভর বৃষ্টির নতুন নজির সৃষ্টি হয়েছে কলকাতায়। পুরসভার হিসাব বলছে কলকাতায় বৃষ্টি হয়েছে প্রায় ৩৩২ মিলিমিটার। যদিও ইতিহাস বলছে, ১৯৭৮ সালের সেপ্টেম্বরের বৃষ্টি ছিল সর্বকালীন রেকর্ড। সেবার, ২৪ ঘণ্টায় প্রায় ৩৮০ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছিল শহরে। প্রবীণদের কথায়, ১৯৭৮ সালে শেষ বার এমন বৃষ্টি দেখেছিলাম। একটানা বৃষ্টি হয়েছিল। তারপর, ভয়াবহ বন্যা হয়েছিল রাজ্যে। লক্ষ লক্ষ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিলেন। এবারও সেই একি দৃশ্য। সারা রাত অবিরাম বৃষ্টি চলল। সকালে উঠে দেখলাম, ভয়ংকর পরিস্থিতি। রাস্তায় বেরোনা মুশকিল। রাস্তায় রাখা ছেলের বাইকটা ডুবে গিয়েছে। চার চাকা গাড়ির সিট ডুবে গিয়েছে। জুন মাস থেকেই বৃষ্টি হচ্ছে। কিন্তু এক রাতের বিপুল বৃষ্টিতে এ অবস্থা দাঁড়াবে কেউ কল্পনাও করেনি।
সোমবার রাত ১২টা থেকে হালকা বৃষ্টিপাত শুরু হলেও মাঝরাতে তা তীব্র আকার ধারণ করে। সঙ্গে ছিল বজ্রগর্জন ও আলোর ঝলকানি। মঙ্গলবার ভোর সাড়ে ৬টার দিকে বৃষ্টির তীব্রতা সামান্য কমে। আইএমডি-র তথ্য অনুযায়ী, পাহাড়ের মেঘভাঙা বৃষ্টি হয়েছে কলকাতায়। সাধারণ নিয়মে, টানা এক ঘণ্টায় ১০০ মিলিমিটারের বেশি বৃষ্টি হলে সেটিকে ‘ক্লাউডবার্স্ট’ বা মেঘভাঙা বৃষ্টি হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। আলিপুর আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে, বঙ্গোপসাগরের বুকে তৈরি হওয়া নিম্নচাপের প্রভাবেই দক্ষিণ ২৪ পরগনা ও কলকাতা সংলগ্ন এলাকাগুলোতে প্রবল বৃষ্টি হয়েছে।
এত বৃষ্টি হলে দুর্গাপুজোর আনন্দ মুহূর্তটা স্তব্ধ হয়ে যাবে। এমনিতেই কাজকারবারের অবস্থা ভালো না। আর্থিক খারাপ পরিস্থিতি কাটিইয়ে উঠতে দুর্গাপুজোর সময় দোকান দেয়। এমন বৃষ্টি তাঁদের মনেও ভয় ধরিয়ে দিয়েছে। কত মানুষের স্বপ্ন এই বর্ষণে ধুয়েমুছে সাফ হয়ে গেল। এরপরেও যদি এইভাবে বৃষ্টি হয়, পুজোর আনন্দ সব মাটি হয়ে যাবে।