হৃদয়ে আহ্লাদিত বড়দিন
কল্যাণ অধিকারী, এডিটর রাজন্যা নিউজ
সাহেবের বড়দিনে কেক কেনাটা বেশ আভিজাত্যপূর্ণ। নামি-দামি কোম্পানির ফুড স্টোরে সুগন্ধি কেক। নাকে ঠেকিয়ে গন্ধ ও স্বাদ দুই-ই টের পাওয়া যায়। স্মার্টফোনে Gpay-অ্যাপটি চালু করে টাচ করতেই পেমেন্ট। তারপর হাতে হাতে প্রিমিয়াম কোয়ালিটির কেক। মিও আমোরে বা মঞ্জিনিস দোকানের বাইরে সার সার মাথা। বড় দিন বলে কথা বাপুজি-টাপুজি আবার কেন শুনি!
পুজোর আগে চুল সেফ করতে সেলুনে লাইন দিই, নবমীতে মাটন কিনতেও একিরকম। ক্রিসমাসের আগের রাতে সাহেবের কোর্ট পড়ে কেক কিনতে গেছি। মিও আমোরে বা মঞ্জিনিসের দোকান থেকেই ভিড় ঠেলে নেব। সামনে এক ‘ঠোঁট’ সরু মহিলা বেশ চটেছেন। তাঁর পছন্দের কেক এবারে নাকি বেশ কয়েকটি সপ-এ মেলেনি। ব্যাঙ্ক চাকুরে মহিলার মুখে মুখে ইংরেজি ঝরে পড়ছে। যাইহোক পছন্দের না পেয়ে, কেক না কিনেই উনি রাস্তা ধরলেন।
রাসবিহারী মোড়ে দোকানটিতে বেশ খোশমেজাজে লোকজন কেক কিনছেন। সান্তাক্লজ হাতে এপ-কার থেকে নামলেন এক জনৈকা। হাফ পাউন্ড কেক নিতে লাইন দেবেন, উমম নৈবচ। ফোন কানে বলতে শোনা গেল, বাপুজি কেনা লোকগুলো ভিড় করেছে নামি-দামি দোকানে! লে হালুয়া! কেন বড়দিনের মতো স্পেশাল ফেস্টিভ্যাল শুধুই কি ওঁদের! যতসব। যা, যা না শালা, খা না গিয়ে আইটিসি থেকে কেক কিনে! বিড়বিড়িয়ে বললেন অমিত দা। দু’চোখে অনেক পাওয়ারের চশমা। ফিলটার উইলস ধরাবেন ভাবছেন, কি মনে করে প্যাকেটে ভরে পকেটে রাখলেন। জানো তো ভায়া একবার বড়দিনে পিকনিকে গিয়েছিলাম বারাসাত। ইয়া বড়ো পুকুরে পাকা রুই মাছ। গাছ ভর্তি কলা, নারকেল। দুপুরে আলু, পেঁয়াজ, আদা-রসুন দিয়ে রুই মাছের ঝোল, ভাত, টমেটোর চাটনি, নলেন গুড়ের রসগোল্লা। আহা, কি স্বাদ, এখনো ঠোঁটে লেগে।
কথাগুলো শুনতে শুনতে ভাবছি, ওঁনাকে বোঝানোর ক্ষমতা আমার নেই। কিন্তু চাল-আলু, বড়জোর ডিম দিয়ে সেদিনকার বড়দিনের পিকনিকের মজা বোঝানো যাবে না। সঙ্গে থাকতো পাঁচ টাকার বাপুজি কেক। এখন সময় অনেকটা এগিয়েছে। বড়দিনের দু’দিন আগে থেকেই বড়দিনের সব তোরজোড় রেডি। খাসির মাংসের ঝোল, ভাত সঙ্গে বাড়তি পাওনা ৬০০-৭০০ টাকার নামি-দামি কোম্পানির প্যাকেজিং করা কেক। তারপর তো রয়েছে হাসি-মশকরা।
দাদা, স্ক্যান করে নিন। সপের ছেলেটার কথা শুনেই পেমেন্ট মিটিয়ে দিলাম। হাতের ক্যারিতে ঝুলছে বড় দিনের আভিজাত্যের কেক। অহংকারের সমাজে যা ক্ষীরকদম, কমলালেবুর থেকেও রূপে গন্ধে ও সোয়াদে অতুলনীয়। ছুটির ঘন্টা বাজা বিতর্কের ত্রিফলা’র নিচ দিয়ে এগিয়ে চলেছি। মনে পঁচিশে ডিসেম্বর আর হৃদয়ে আহ্লাদিত বড়দিন।
collected pic