মাইনাস ডিগ্রিতে বর্ডারে খোলা আকাশের নিচে দু’রাত কাটিয়ে ইউক্রেন থেকে ফিরলেন নারিটের মিখাইল
কল্যাণ অধিকারী, এডিটর রাজন্যা নিউজ
দীর্ঘ উৎকন্ঠার পর যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউক্রেন থেকে গ্রামীণ হাওড়ার আমতা থানার নারিট গ্রামে ফিরলেন ডাক্তারি পড়ুয়া মিখাইল আলম। শনিবার দুপুরে বাড়িতে মা বাবার সঙ্গে কথা বলার সময় চোখে-মুখে আতঙ্ক স্পষ্ট। টিভিতে যুদ্ধের সাইরেনের শব্দ, বোমার আওয়াজের আতঙ্ক কাটিয়ে ছেলেকে ফিরে পেয়ে স্বস্তি ফিরেছে পরিবারে।
ইভানো ফ্রানকিভস ন্যাশানাল মেডিক্যাল ইউনিভার্সিটির তৃতীয় বছরের ডাক্তারি পড়ুয়া মিখাইল। গত বছর জানুয়ারি মাসে কোভিড পরিস্থিতিতে ফিরেছিল বাড়ি। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে অগাস্ট মাসে ফিরে গিয়েছিল বাড়ির বড় ছেলে। কিন্তু ফেব্রুয়ারি মাসের ২৩ তারিখ এয়ারস্টাইক শুরু হতেই পরিস্থিতি বদলে যায়। কোন ভাবেই আর থাকা যাবে না বুঝতে পেরে যায়। বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে জোরাজুরি করা হয়নি। বলা হয়ে ফিরে যাবার হলে ফিরে যেতে পারো। বন্ধুরা মিলে বাস ভাড়া করে ইভানো ছাড়ে। তারপর পরিস্থিতি জটিল হয়ে ওঠে। কাঁধে ব্যাগ হাতে জাতীয় পতাকা ওইটুকু সম্বল করেই দেশে ফেরার জন্য পৌঁছে যায় রোমানিয়া বর্ডার।
বাবা-মায়ের পাশে বসে এদিন মিখাইল জানান, “ইভানো ছাড়ার পরেই চোখের সামনে ধ্বংসের ছবি। বাবা-মায়ের কাছে ফোনে সবটাই জানাই। বাধা বিঘ্ন কাটিয়ে বন্ধুদের সঙ্গে বাসে করে এগিয়ে চলি। রোমানিয়া বর্ডার পার করতে দু’দিন সময় লাগে। যা ছিল অত্যন্ত কষ্টের। দু রাত খোলা আকাশের নিচে মাইনাস ডিগ্রি তাপমাত্রায় কাটাতে হয়েছে। এম্বেসির লোকজনের দেখা মেলেনি। নিজেরাই সাত-আট ঘন্টার বেশি লাইন দিয়েছি। বর্ডার পার করার পর রোমানিয়া সরকার ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন যথেষ্ট সহায়তা করেছে। শেল্টার হাউসে রাখা হয় দু’দিন। তারপর ট্যাক্সি নিয়ে এয়ারপোর্টে পৌঁছে যাই। দু তারিখ দিল্লির উদ্দেশ্যে বিমানে রওনা হই। বৃহস্পতিবার ভোর সাড়ে পাঁচটায় দিল্লি। ওখান থেকে শুক্রবার রাতে নারিট গ্রামে পৌঁছাই।
মিখাইলের বাবা নাসিরুদ্দীন আমতা কোর্টের ল-ক্লার্ক। বড় ছেলে ইউক্রেনে পড়াশোনা করছে। ছোট ছেলে তাঁর সঙ্গে কোর্টের কাজ করে। যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউক্রেন থেকে ছেলে ফিরেছে স্বস্তি মিলেছে। ভারত সরকার ও রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন তিনি। পাশাপাশি এ-ও জানিয়েছেন ভারতের বিভিন্ন প্রান্তের বহু ডাক্তারি পড়ুয়া আটকে রয়েছে ইউক্রেনে। তাঁদের দ্রুত ফিরিয়ে আনার জন্য আবেদন করেছেন। ছেলে ফিরে আসায় প্রতিবেশীদের মিষ্টিমুখ করান মা লুৎফান্নেসা। তিনি জনান, প্রত্যেক সন্তান ফিরে আসুক মায়ের কাছে। পাশাপাশি এ-ও বলেন, ‘যুদ্ধ ধ্বংস ডেকে আনে, কখনোই সমস্যার সমাধান হতে পারেনা’।