তৃণমূলকে ছত্রে ছত্রে আক্রমণ ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান ব্রাত্যই থেকে গেল
কল্যাণ অধিকারী ও ব্যুরো রিপোর্ট
মার্চ মাসের শুরুটা তৃণমূলকে আক্রমণ দিয়ে শুরু করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। লোকসভা ভোটের মুখে দু’দিনের বঙ্গ সফরে শুক্রবার হুগলির আরামবাগে সভা করলেন। প্রধানমন্ত্রীর ভাষণে আগাগোড়া ছিল শুধুই তৃণমূল ও রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীকে আক্রমণ। সন্দেশখালি কান্ড এবং শাহজাহানের গ্রেফতারি প্রসঙ্গ তাঁর মুখে। কেন্দ্রের টাকা ব্যবহার করছে না রাজ্য অভিযোগের সুর ধরা দিল। এককথায় শাসকবিরোধী প্রচারে বঙ্গ বিজেপিকে তুষ্ঠ করলেন প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান নিয়ে ঘাটাল বাসীকে ভুলেই গেলেন তিনি!
চল্লিশ বছর পর আরামবাগে কোন প্রধানমন্ত্রী আসলেন। এর আগে এসেছিলেন ইন্দিরা গান্ধী। স্বভাবতই মোদী ম্যাজিকের অপেক্ষায় ছিলেন আরামবাগবাসীরা। কিন্তু বাস্তব হল আরামবাগ থেকে বাংলায় লোকসভা ভোটের মূল পর্বের প্রচার শুরু করে দিলেন। আরামবাগের ৭টি বিধানসভা কেন্দ্র। তারমধ্যে বিজেপির ঝুলিতে চারটি। ফলে লোক ভরানোর জন্য বেগ পেতে হয়নি। কালিপুর বিজয় ক্রীড়াঙ্গন মাঠে ছিল থিকথিকে ভিড়। কিন্তু ‘ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান’ নিয়ে আশাহত হলেন উপস্থিত কর্মীদের একাংশ। তবে কি শুধুমাত্র নির্বাচন ইস্যু হয়ে থাকবে ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান? গত মাসে আরামবাগে প্রশাসনিক সভায় মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করেছিলেন ‘কেন্দ্রের অপেক্ষায় বসে না থেকে ১২৫০ কোটি টাকা দিয়ে রাজ্যই কাজ করবে’। কিন্তু বিজেপি কর্মীরা চাইছিলেন ঘাটালের মানুষের কথা প্রধানমন্ত্রী বলুন! প্রকল্পটি কার্যকর করার দাবি কয়েক দশক ধরে করে আসছে দুই মেদিনীপুর এবং আরামবাগ মহকুমার বাসিন্দারা।
আরামবাগে ১৯৮৪ সাল থেকে সাংসদ ছিলেন বামেদের অনিল বসু। ২০০৯ শক্তি মোহন মালিক সাংসদ হন। ১৪ সাল থেকে অপরূপা পোদ্দার সাংসদ। সংসদে অপরূপার বাগ্মিতায় খুশি তৃণমূল। বিজেপি এবার আরামবাগ ছিনিয়ে নিতে প্রধানমন্ত্রীকে দিয়ে প্রথম সভা করাল। প্রধানমন্ত্রী তাঁর ভাষণে সন্দেশখালি নিয়ে বোঝাতে গিয়ে রামমোহন রায়ের আত্মা কাঁদছে বললেন। আরামবাগ লোকসভা ক্ষেত্রের মধ্যে খানাকুলে জন্ম রাজা রামমোহন রায়ের। মোদীর কথায়, তৃণমূল রাজ্যের ক্ষতি করেছে! ক্ষতি করেছে গ্রামীণ মানুষজনদের! যদিও এই একি বিষয়ে কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদী সরকারকে কাঠগড়ায় তুলেছে শাসক তৃণমূল। তাঁদের দাবি ছিল, মোদি সরকার গত ২ বছর ধরে হতদরিদ্র মানুষের একশো দিনের কাজের বকেয়া টাকা আটকে রেখেছে। রাজ্যের পক্ষ থেকে শ্রমিকদের একাউন্টে পাঠানো হচ্ছে টাকা। এদিন প্রধানমন্ত্রী বাংলার দুর্নীতি নিয়ে সরব হয়েছেন। তিনি বলেন, ‘ইয়ে মোদি ছোড়নে বালা নেহি হ্যায়’। আরামবাগের তৃণমূল নেতাদের একাংশের কথায়, ওঁর মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন শুভেন্দু অধিকারী। ওঁকে নারোদা কাণ্ডে টাকা নিতে দেখা গিয়েছে! নেত্রীর সুরে সুর দিয়ে বলেন ‘ওয়াশিং মেশিন নাকি! তৃণমূলে থাকলে কালো, বিজেপি-তে ভাল’!
কর্নাটকে ভোটপ্রচারে প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন কংগ্রেস তাঁকে ৯১ বার গালি দিয়েছে। আরামবাগে এদিন তিনি বলেন তৃণমূলের হামলা ও গালাগালিতে ভয় পাই না। মোদি কাউকে ছেড়ে কথা বলবে না। টাকার বান্ডিল উদ্ধার নিয়েও বলেন। কর্মীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আমি যা করছি ঠিক করছি কিনা? বিশেষজ্ঞদের মত লোকসভা ভোটের আগে তাঁকে ‘গালি দেওয়ার’ কথা বলে গ্রামবাংলার মানুষের কাছে সহানুভূতি আদায়ের চেষ্টা করলেন। বক্তব্য শেষে ৪০০ পার না বলে কর্মীদের উদ্দেশ্যে বলেন, এইবার, এইবার, এইবার কর্মীরা বলেন ৪০০ পার!