আমতায় আনিস কান্ডে অন্যতম সাক্ষীর উপর রাতে দুস্কৃতি হামলা

কল্যাণ অধিকারী

আমতার মৃত ছাত্রনেতা আনিস খানের খুড়তুতো ভাই সলমন খানের ওপর রাতে দুস্কৃতি হামলা। গুরুতর আহত ও রক্তাক্ত সলমনকে রাতেই উলুবেড়িয়া হাসপাতালে সিসিইউ-তে ভর্তি করানো হয়েছে। আনিস কাণ্ডে অন্যতম সাক্ষী এই সলমন খান। শনিবার ভোর রাতে তাঁর উপর অস্ত্র দিয়ে হামলার অভিযোগ উঠেছে। ঘটনার জেরে আমতার সারদা গ্রামের দক্ষিণ খাঁ পাড়ায় শনিবার দিনভর চাপা উত্তেজনা।

আনিসের বাড়ি থেকে প্রায় পাঁচশো মিটার দূরে বাড়ি সলমনের। দাদা আনিসের মৃত্যুর সঠিক বিচারের দাবিতে প্রথম থেকে আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছেন। দ্বিতীয়বার ময়নাতদন্তের সময় এমনকি আদালতে গোপন জবানবন্দি দেওয়ার ক্ষেত্রে সলমন ছিল অন্যতম সাক্ষী। শনিবার বেলায় সলমনের বাড়ির দুয়ারে রাখা চেয়ারে বসে আনিসের বাবা সালেম খান সমস্তটা জানালেন। তাঁর প্রতিটি কথায় রাজ্যের শাসক দলের প্রতি আক্রমণ। সলমনের উপর আক্রমণের ঘটনায় গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান এবং উপপ্রধানের দিকে আঙুল তুলেছেন তিনি। সালেম বাবুর সাফ কথা, “সাক্ষ্যপ্রমাণ মুছে দিতে ধারালো অস্ত্র দিয়ে একাধিক বার কোপানো হয়েছে সলমনকে। বৌমা ছুটে আসায় দুস্কৃতিরা বাড়ির পিছন দিয়ে পালিয়ে যায়। আগেও বলেছি এখনো বলছি সিবিআই তদন্ত হলে সমস্তটা পরিস্কার হয়ে যাবে।”

বছর দুয়ের আগে বিয়ে করেছে সলমন। ঘরে মাস ছয়েকের একটি সন্তান রয়েছে।  স্ত্রী হোসেনারা খাতুন জানান, “কলকাতা থেকে ফিরতে রাত হয়ে যায়। এরপর ও বাড়ির বাইরে যাবে বলে। বাড়ির পিছন দিকে যাচ্ছে বলায় আমিও সঙ্গে যাই। বাথরুমে ছিলাম বাইরে ওর চিৎকার শুনে বেড়িয়ে দেখি একজন গেঞ্জি পড়া যুবক পালিয়ে যাচ্ছে। মাটিতে লুটিয়ে পড়া সলমনের শরীর রক্তে ভেসে যাচ্ছে। পরিবারের লোকজন ও আশপাশের লোকজন মিলে বাগনান হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। ওখান থেকে উলুবেড়িয়া মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। এর আগেও দুবার হামলা চালিয়েছে দুস্কৃতিরা। আনিস কান্ডে প্রধান সাক্ষী হওয়াতেই বারেবারে হামলা চালানো হচ্ছে। আমরা প্রচন্ড আতঙ্কিত।”

পরিবারের দাবি, রাতেই আমতা থানার পুলিশ আসে। প্রথমবার রাত আড়াইটের সময়। তার আধঘন্টা পরে আবারো আসে। এদিন সকাল থেকেই সলমনের বাড়ির সামনে মানুষের ভিড়। চলে আসেন আমতার প্রাক্তন বিধায়ক অসিত মিত্র। তিনি এই ঘটনায় শাসকদলের দিকেই আঙুল তুলেছেন। তিনি জানান, এই ঘটনার তীব্র ধিক্কার জানাই। আমরা আমতা থানায় প্রতিবাদ পত্র জমা দেব। স্থানীয় বামপন্থী সদস্যরা আসেন। আনিসের বাবার সঙ্গে কথা বলেন। অন্যদিকে আমতার ডিএসপি ঘটনাস্থলে আসেন। আমতা থানার পুলিশ আধিকারিরা উলুবেড়িয়া হাসপাতালে গিয়ে সলমনের বক্তব্য নিয়েছেন। সলমনের একতলা বাড়ির চৌকাঠে বসে কেঁদে চলেছেন মা সাহানারা, উলুবেড়িয়া হাসপাতালে ছেলেকে সুস্থ করে তুলতে রাত থেকে বসে বাবা জালেম খান।

অন্যদিকে স্থানীয় বাসিন্দারা সলমনের উপর হামলার ঘটনায় সিঁদুরে মেঘ দেখছে। তাঁদের আশঙ্কা আদালতে গোপন জবানবন্দি দেওয়া আর এক খুড়তুতো ভাই শাহরুখের উপর হামলা হবে না তো! দুটি পরিবারের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করুক পুলিশ এমনটাই দাবি স্থানীয়দের।

নিজস্ব চিত্র

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *