দুর্ঘটনাগ্রস্ত হকারের সুস্থতায় ঝাঁপিয়ে পড়লেন মহিলা-পুরুষ যাত্রী ও রেল কর্মীরা
কল্যাণ অধিকারী
হাইলাইটস
❏করোনা পরিস্থিতির মাঝেই অন্য চিত্র সাঁকরাইল স্টেশনে
❏প্ল্যাটফর্মে মুখ থুবড়ে পড়ে যাওয়া হকারের সুস্থতায় এগিয়ে আসলেন যাত্রীরা
❏রেল কর্মীরা ফোন করে পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করে চিকিৎসার ব্যবস্থা করলেন
করোনা সংক্রমণে দেশ উত্তাল। ট্রেনে-বাসে গায়ে গা ঠেকলেই তিতিবিরক্ত মানুষ। এমন একটি সময় দুর্ঘটনাগ্রস্ত হকারের সুস্থতায় মহিলা ও পুরুষ যাত্রী থেকে রেল কর্মীরা একত্রে ঝাঁপিয়ে পড়লেন। হাসপাতালে চিকিৎসার ব্যবস্থাও করলেন তাঁরা। ঘটনাটি দক্ষিণ-পূর্ব রেলের সাঁকরাইল স্টেশনের। আহত হকারের নাম কাশী সাউ। বয়স ৫৫।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার ঘড়ির কাঁটা তখন দুপুর ২টোর ঘরে। আপ পাঁশকুড়া লোকাল সাঁকরাইল স্টেশনের ১নং প্ল্যাটফর্মে থামে। হকার কাশীবাবু এক কামরা থেকে নেমে দৌড়ে ভিড় থাকা অন্য কামরায় উঠতে যায়। ট্রেন ছেড়ে দেওয়ায় গেটের রড ধরবার আগেই প্ল্যাটফর্মে মুখ থুবড়ে পড়েন তিনি। পিঠে থাকা চানা মশলা ও মুড়ির ডাম পড়ে প্ল্যাটফর্ম ময় ছড়িয়ে ছিটিয়ে। উনি ট্রেনের দিকেই গড়িয়ে যাচ্ছিলেন। তখনি দুই যাত্রী ধরে ফেলেন। মাথায় চোট লাগায় সংজ্ঞাহীন হয়ে যান। কয়েকজন মহিলা ও পুরুষ যাত্রী ছুটে এসে মাথায় জল দিয়ে সুস্থ করার চেষ্টায়। ততক্ষণে ট্রেন আবাদা স্টেশনের দিকে চলে গেছে। মহিলাদের ডাকাডাকিতে ছুটে আসেন প্ল্যাটফর্মে থাকা দুই সিগন্যাল কর্মী ও রেল সুরক্ষা বাহিনীর এক আধিকারিক। হকারের বাম পায়ের মালাইচাকি ভেঙেছে। প্রাথমিক চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন তাঁরা। পাশাপাশি পরিবারের সঙ্গেও যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়।
রেল কর্মীদের কথায়, ওই ব্যক্তি ট্রেনে হকারের কাজ করেন। ট্রেনে উঠতে গিয়ে প্ল্যাটফর্মে পড়ে যান। মাথায় গুরুতর আঘাত লাগে। ওঁনার পকেটে থাকা মোবাইলের শেষ কল করা ব্যক্তিকে ফোন করা হয়। বাড়ির এক মহিলা ফোন ধরেন। ভাইপো কে পাঠানো হচ্ছে। এরপরেই ওঁনার জামাই ফোন করেন। উলুবেড়িয়া স্টেশনে আসতে বলা হয়। ট্রেনে করে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয় উলুবেড়িয়ায়।
যাত্রী ও হকারদের কথায়, কাশী বাবুর বাড়ি উলুবেড়িয়ার পীরপুরে। দুই মেয়ের বিয়ে হয়ে গিয়েছে। ট্রেনে হকারি করেই জীবন যাপন করেন। মাস্ক পড়েই হকারি করছিলেন উনি। করোনা পরিস্থিতির মধ্যেও কি মানুষকে অসুস্থ অবস্থায় ফেলে রাখা যায়! এদিন উনি ট্রেনে উঠতে গিয়ে পড়ে গেছেন দেখেই সকলে ছুটে আসে। মাথায় জল দিয়ে জ্ঞান ফেরানোর চেষ্টা চলে। এক মহিলা হকার নিজের গামছা দিয়ে মুখ হাত পা মুছে দেন। বাম পায়ের হাড় ভেঙে গিয়েছে। পা ফেলতে পারছেন না। রেল কর্মীরাও চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন। মানুষের পাশে মানুষ না থাকলে কি হবে! করোনা বাড়বাড়ন্তের মাঝে মানুষ যখন দূরত্ব বজায়ের চেষ্টায় এমন একটি সময়ে দুর্ঘটনাগ্রস্ত হকারের সুস্থতায় মহিলা ও পুরুষ যাত্রী থেকে রেল কর্মীরা একত্রে ঝাঁপিয়ে পড়লেন।
উল্লেখ্য ক’দিন আগে মহারাষ্ট্রের ভাঙ্গন স্টেশনে নিজের জীবন বাজি রেখে ৬ বছরের শিশুর প্রাণ বাঁচিয়েছিলেন এক রেলকর্মী। খোদ রেলমন্ত্রী পীযূষ গয়াল তাঁর ভিডিও পোস্ট করেছিলেন। দেওয়া হয় সংবর্ধনা। এবার দক্ষিণ-পূর্ব রেলের সাঁকরাইল স্টেশনে ট্রেনে উঠতে গিয়ে প্ল্যাটফর্মে মুখ থুবড়ে পড়ে যাওয়া হকারের চিকিৎসায় ঝাঁপিয়ে পড়লেন রেল কর্মী সহ যাত্রীরা।