নলপুরে ডাউন লাইনে ঢোকার মুখে ট্রেন বেলাইন যাত্রী নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্নের মুখে রেল

কল্যাণ অধিকারী

নলপুরে অল্পের জন্য ভয়ঙ্কর দুর্ঘটনার হাত থেকে রক্ষা পেল শালিমার-সেকেন্দ্রাবাদ সাপ্তাহিক এক্সপ্রেসের যাত্রীরা। শনিবার ভোরের আলো সবে ফুটেছে ট্রেন নলপুর স্টেশনের কাছে মেন লাইন ছেড়ে ডাউন লাইনে ঢোকার মুখে ইঞ্জিন সহ বেশ কয়েকটি কামরা লাইনচ্যুত হয়। বড়সড় ক্ষয়ক্ষতি বা হতাহতের কোনও ঘটনা না ঘটলেও ট্রেনটি কেন বেলাইন হল সেই প্রশ্ন ভাবাচ্ছে সহ মহলকে।

যাত্রীদের কথায়, উলুবেড়িয়া স্টেশন ছুঁয়ে ট্রেন তখন ছুটছে শালিমার অভিমুখে। অনেক যাত্রী লাগেজ নিয়ে গেটের কাছে পৌঁছাতে শুরু করেছে। কারণ শালিমারে গাড়ির যোগাযোগ ঠিকঠাক থাকে না। তাই সাঁতরাগাছি নেমে যাবে। নলপুর স্টেশনের কাছে হঠাতি বিকট শব্দ ও ঝাঁকুনি। গতি কম থাকলেও অনেক যাত্রী কামরার মধ্যেই পড়ে যায়। ট্রেনের কামরা লাইনচ্যুত হয়েছে জেনেই তাড়াহুড়ো করে যাত্রীরা ট্রেন থেকে নামতে শুরু করে দেয়। এনামুল হক নামে এক যাত্রী বলেন, সেকেন্দ্রাবাদ থেকে ফিরছিলাম। তখন ভোর সাড়ে পাঁচটা বাজে। সাঁতরাগাছি নামব বলে গেটে বাথরুমের পাশটায় ব্যাগ নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলাম। হঠাতি ঝাঁকুনিতে ওখানেই পড়ে যাই। হাতে লেগেছে। তবে গুরুতর আঘাত নয়। আমার মতো অনেকেই পড়ে গিয়েছিলেন। ট্রেন থেকে নেমে গাছ তলায় গিয়ে বসি। ট্রেনের গতি বেশি থাকলে কি হতো ভেবেই আতঙ্কিত যাত্রীরা।

দক্ষিণ পূর্ব রেলওয়ের প্রধান জনসংযোগ আধিকারিক (সিপিআরও) ওম প্রকাশ চরণ জানিয়েছেন, শনিবার ভোর ৫টা একত্রিশ মিনিটে ডাউন সেকন্দ্রাবাদ-শালিমার সাপ্তাহিক এক্সপ্রেস নলপুর স্টেশনে মিডিল লাইন থেকে ডাউন লাইনে যাওয়ার সময় লাইনচ্যুত হয়ে যায়। একটি পার্সেল ভ্যান ও দুটি যাত্রিবাহি কামরা লাইনচ্যুত হয়। রেলের আধিকারিকরা দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে যায়। যাত্রীদের কারো কোন গুরুতর আঘাত লাগার খবর মেলেনি। ১০টি বাসের ব্যবস্থা করে যাত্রীদের গন্তব্যে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হচ্ছে। বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।

নলপুরে ট্রেন দুর্ঘটনার পরেই হাওড়া যাওয়ার লোকাল ট্রেন বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেয় দক্ষিণ-পূর্ব রেলওয়ে। শনিবার অফিস যাবার পথে দুর্ভোগে পড়েন যাত্রীরা। রেল দফতর সূত্রে খবর, ২০৮৭১ হাওড়া রাউরকেল্লা বন্দে ভারত এক্সপ্রেস সকাল ৬ টার পরিবর্তে বেলা ১০ টায় ছাড়ে। অন্যদিকে ২২৮৯৫ হাওড়া পুরী বন্দে ভারত এক্সপ্রেস সকাল ৬.১০ এর পরিবর্তে ১০.১০ এ হাওড়া থেকে ছেড়েছে। সাঁতরাগাছি-পুরুলিয়া ১২৮৮৩ রূপসী বাংলা এক্সপ্রেস, হাওড়া-বারবিল ১২০২১ জন শতাব্দী এক্সপ্রেস, হাওড়া-তিতলাগড় ১২৮৭১ ইস্পাত এক্সপ্রেস, হাওড়া-দীঘা ১২৮৫৭, ১২৮৮৫ আরণ্যক এক্সপ্রেস, হাওড়া-সেকেন্দ্রাবাদ ১২৭০৩ ফলকনামা এক্সপ্রেস, ১২৮২১ শালিমার-পুরী ধৌলি এক্সপ্রেস সময় পরিবর্তিত হয়ে ছেড়েছে গন্তব্যের উদ্দেশ্যে।

নলপুরের যে অংশে দুর্ঘটনা ঘটেছে সেই অংশে তিনটি লাইন রয়েছে। আপ লাইন, ডাউন মেন লাইন, মিডল লাইন। মিডল ও ডাউন লাইন সম্পূর্ণ আটকা পড়ে। স্থানীয়দের এবং যাত্রীদের কথায়, যে সময় দুর্ঘটনাটি ঘটে তখন গাড়ির গতি ছিল ঘন্টায় ১৫-২০ কিমি প্রতি ঘণ্টায়। অন্যদিকে সপ্তাহের শেষ দিনে ট্রেন দুর্ঘটনাতে চরম ভোগান্তিতে পড়েন যাত্রীরা। সকালের দিকে লোকাল ট্রেন বন্ধ থাকায় কাজে বেরিয়ে নাজেহাল হন যাত্রীরা। নল্পুর থেকে বহু যাত্রী লাইন ধরে হেঁটে সাকরাইল পৌঁছে ১৬ নং জাতীয় সড়ক দিয়ে বাসে করে রওনা দেয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *