সোনিয়া-মমতা আরও কাছাকাছি, ২৪-এর ভোটের আগে জোটের প্রস্তুতি

কল্যাণ অধিকারী

দশ জনপথে সোনিয়া গান্ধীর বাসভবনে তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। লক্ষ্য ২৪-এর লোকসভা নির্বাচন। বিজেপি বিরোধী দলগুলিকে এক ছাতার তলায় নিয়ে আসা। সেই লক্ষ্যে কংগ্রেস সভাপতি সোনিয়া গান্ধীর সঙ্গে মমতার বৈঠক যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ।

২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে বিপুল জনসমর্থন পেয়েছিল বিজেপি। ঠিক ততটাই ফলাফল খারাপ হয়েছিল কংগ্রেসের। তবে সেসব এখন অতীত। সামনে ২৪-এর লোকসভা ভোট। তার আগে উত্তরপ্রদেশের মতন রাজ্যে বিধানসভা ভোট। বিরোধী শক্তিকে একজোট করতে রাজধানীতে মমতা। বিজেপি বিরোধী বিভিন্ন দলের নেতাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। বুধবার বিকেলে সোনিয়া-রাহুলের সঙ্গে বৈঠক করেন মমতা, যা এককথায় ছিল তাৎপর্যপূর্ণ। ২০২৪-এর লোকসভা ভোটে সাফল্য পেতে কংগ্রেস সহ বিজেপি বিরোধী দলের সঙ্গে জোট তৈরি করা। এবং জোটের মুখ হবেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও সনিয়া গান্ধী। সেই লক্ষ্যে এদিনের বৈঠক। তাতে যোগ দিয়েছিলেন রাহুল গান্ধীও। মত রাজনৈতিক মহলের একাংশের।

প্রায় দু’বছর পর আবারও মমতা-সনিয়া মুখোমুখি। মোদীকে গদিচ্যুত করার লক্ষ্যে কংগ্রেস-তৃণমূল দুই শিবির যে গাঁটছড়া বাঁধছে প্রায় নিশ্চিত রাজনৈতিক মহল। পেগাসাস নিয়ে লোকসভা ও রাজ্যসভা দুই কক্ষে একত্রিত বিরোধীরা। মোদী বিরোধিতাকে চরম পর্যায়ে নিয়ে গেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দল তৃণমূল ও কংগ্রেস। যোগ্য সঙ্গত দিচ্ছে বাকি রাজনৈতিক দল। এর আগে দ্বিতীয় ইউপিএ সরকার আমলে কংগ্রেসের সঙ্গে হাত ধরেছিল তৃণমূল। কিন্তু পুরো পাঁচ বছর একসঙ্গে থাকেনি। আবারও লোকসভা ভোটের কয়েক বছর আগে কংগ্রেস-তৃণমূল এক মঞ্চে। দুই রাজনৈতিক দলের প্রধান মুখোমুখি হলেন। বিভিন্ন বিষয় আলোচনার মাধ্যমে মনটা বুঝলেন মমতা।  

এই মুহূর্তে দেশে বিরোধী নেত্রীর জনপ্রিয়তায় অনেকটাই এগিয়ে গিয়েছেন তৃণমূল সুপ্রীমো। পশ্চিমবঙ্গে বিজেপিকে ক্ষমতায় আনার জন্য মোদী-শাহ জুটি ডেলিপ্যাসেঞ্জারি করলেও মমতার সামনে উবে গিয়েছেন। দেশের বিরোধী দল থেকে সাধারণ মানুষ বোঝেন মোদীকে হঠাতে একমাত্র বিকল্প মমতাই। কৃষকদের পাশে থাকা, ঠিকঠাক ভ্যাকসিন পাইনি রাজ্য। পেগাসাস-দৈনিক ভাস্কর-কাণ্ড নিয়ে প্রথম থেকে সরব মমতা। সর্বভারতীয় রাজনীতিতে জনপ্রিয়তায় প্রথম তিনিই মত রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের একাংশের। স্বচ্ছ মুখ যেমন মমতা, তেমনি মোদীকে কড়া লড়াই দিতে পারবেনও তিনি। মমতার বিষয় প্রণব মুখার্জি লিখে গেছেন, ‘মমতা ব্যানার্জীর একটা ক্যারিশমা বা সম্মোহনী ক্ষমতা আছে’।

প্রতিপক্ষ যতই শক্তিধর হোক তাঁর লড়াইয়ের তীব্রতা ঠিক ততটাই বাড়ে। এ কারণেই প্রণব বাবু বলেছেন, রাজনীতিতে অনেকদূর যাবেন মমতা। ওঁর যোগেশচন্দ্র কলেজ থেকে আইনের ডিগ্রি রয়েছে। আইনটাও ভালো বোঝেন। এদিন সোনিয়ার সঙ্গে বৈঠক সেরে বেরিয়ে সাংবাদিকদের বলেন, অনেক বিষয় নিয়ে কথা হয়েছে। পেগাসাস, ভ্যাকসিন সহ একাধিক বিষয় উঠে এসেছে। আরও বলেন, তিনি লিডার নন, ক্যাডার। বিজেপিকে হারাতে সবাইকে জোটবদ্ধ হয়ে লড়তে হবে। সনিয়ার সঙ্গে বৈঠকের পরেই মমতা-কেজরিওয়াল সাক্ষাৎ। উপস্থিত ছিলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ও।

দিল্লি এসে মমতা আবার প্রমাণ করে দিলেন যে, ভারতের রাজনীতিতে এখনো অপরাজেয় তিনি। কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন দল বিজেপিকে অনেকটাই কোনঠাসা করতে সফল হয়েছেন মমতা।

ছবি সংগৃহীত।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *