জাগলগরি ও ধাঁইপুর গ্রামে সন্ধ্যায় দুই পৌঢ়র মৃতদেহ ভেসে উঠল পুকুরে, চাঞ্চল্য এলাকায়
কল্যাণ অধিকারী
দু’টি গ্রাম, দুটি পুকুর আর দুই পৌঢ়র মৃত্যু সময়টাও যেন এক শুক্রবার সন্ধে। দুই পৌঢ়র মৃতদেহ ভেসে উঠতেই জাগলগরি ও ধাঁইপুর দু’টি গ্রামেই চাঞ্চল্য ছড়ায়। খবর পেয়ে পৌঁছে যায় আমতা ও জয়পুর দু’টি থানার পুলিশের টিম। দেহ দু’টি ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে।
জাগলগরি গ্রামের মৃত পৌঢ়র নাম দীনবন্ধু রীত বয়স ৭১। স্বামী-স্ত্রী দুজনের সংসার। ছেলে নেই। তিন মেয়ের বিয়ে হয়ে গিয়েছে। অসহায় পরিবারের ছিটেবেড়া দেওয়া ঘরে কোনোক্রমে সংসারটুকু চলে। তারমধ্যেই শুক্রবার আসলো মর্মান্তিক খবর। স্বামীকে হারিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েছেন অসহায় স্ত্রী লিখা রীত। মেয়েদের বিয়ে হয়েছে বহুদূরে কিছু হলে পাশে দাঁড়াবে কে কান্নার মাঝেই বলে চলেছেন অশিতীপর বৃদ্ধা লিখা রীত। পাশের পড়শির বাড়ির দালানে বসে রয়েছেন। তিনি বলেন, শুক্রবার বেলা ১১ টার পর থেকেই খোঁজ মিলছিল না। আশপাশের এলাকায় খোঁজখবর নেওয়া হয়। কিন্তু কোথাও দেখা মেলেনি। সন্ধ্যায় জানতে পারেন একটি পানা পুকুরে দেহ ভাসছে। মেয়েদের জানিয়েছি। তাদের আসতেও সময় লাগবে। ঘটনা জানাজানি হতেই স্থানীয়রা রাস্তায় নেমে এসেছেন। কিন্তু কে আমাকে দেখবে কথাগুলো বলতে বলতেই কান্নায় ভেঙে পড়েন।
বৃদ্ধার বাড়ির পাঁচশো মিটারের মধ্যে পুকুরে ভাসছে দেহ। কিন্তু এই পাঁচশো মিটার পৌঁছান বেশ কষ্টকর ছিল। রাস্তা নেই। অন্ধকারে কাদামাখা পথে উঁচু ঢিবি পার করে ঘটনাস্থলে পৌঁছাতে হয়। দেহের পাসে ভাসছে কাঁকরোল। কয়েকজন গ্রামবাসী জঙ্গলের মাঝে টর্চ জ্বেলে দেহ দেখাচ্ছেন। তাঁদের কথায় গাছ থেকে কাঁকরোল পারছিলেন। তা পুকুর থেকে আনতে গিয়ে জলে ডুবে বৃদ্ধের মৃত্যু হয়ে থাকতে পারে। ঘটনাস্থলে পৌঁছাতে আমতা থানার পুলিশকেও যথেষ্ট বেগ পেতে হয়। পৌঢ়র মৃত্যু তদন্ত করে সমস্তটা দেখছেন।
অন্য ঘটনাটি ঘটেছে আমতা-২ ব্লকের ধাঁইপুরে। শ্মশান লাগোয়া একটি ঘরে থাকতেন এক সাধু। শুক্রবার সন্ধ্যায় শ্মশানের পুকুরে সাধুর দেহ ভাসতে থাকায় চাঞ্চল্য ছড়ায় এলাকায়। স্থানীয়দের কাছ থেকে জানতে পেরে ঘটনাস্থলে পৌঁছায় জয়পুর থানার পুলিশের একটি টিম। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে ওই সাধুর বয়স ৬৮। শ্মশানে দাহ করতে আসা মানুষজন বৃষ্টিতে না ভেজেন সে কারণে একটি ঘর করা হয়। শ্মশানের পাশে ওই ঘরে থাকতেন সাধু। তাঁর কোথায় বাড়ি কিছুই জানে না গ্রামবাসীরা। কয়েক বছর আগে শ্মশানের ঘরেই বাসস্থান গড়ে তোলেন। এ দিন কখন থেকে পুকুরে দেহ ভাসছে কেউ জানে না। সন্ধের আগে গ্রামের লোকজন দেহটি পুকুরে ভাসতে দেখতে পায়। জয়পুর থানার এসআই বিশ্বরূপ দাস বলেন, ‘ওঁনার পরিচয় জানার চেষ্টা চলছে। দেহ ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হবে’।
জাগলগরি ও ধাঁইপুর গ্রামে দুই পৌঢ়র মৃত্যু চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে এলাকায়। একদিন আগেই ধাঁইপুর গ্রামে এক ব্যক্তির দেহ ঝুলন্ত অবস্থায় উদ্ধার হয়।