মুড়িগঙ্গা অন্তরায়! জনপ্রিয় সাগরদ্বীপের দুর্দশা ঘুচল কই|পর্যটন ভাবনাও সেই তিমিরেই

কল্যাণ অধিকারী এডিটর রাজন্যা নিউজ

লাক্ষাদ্বীপ নামটা এখন সকলের মুখে মুখে। সৌজন্যে প্রধানমন্ত্রীর তোলা ছবি। কিন্তু আপনি কী জানেন পশ্চিমবঙ্গে এক জনপ্রিয় দ্বীপ রয়েছে! প্রায় দু’লক্ষের বেশি মানুষের বসবাস। বঙ্গোপসাগরের গা ঘেঁষে রয়েছে একের পর এক গ্রাম। বাড়ির জানালা খুলে দিলে দখিনের ঘরে মিঠে হাওয়া বয়। এখানকার মানুষদের মায়াময় চোখ ও আন্তরিকতা আপনার মন ভালো করে দেবে। এমন সুন্দর দ্বীপটির নাম সাগরদ্বীপ।

মুড়িগঙ্গা ও বঙ্গোপসাগরের বেষ্টনীতে ঘেরা সাগরদ্বীপ। কলকাতা থেকে দূরত্ব প্রায় ১০০ কিমি। রেলপথ ও সড়কপথে সরাসরি যোগাযোগে অন্তরায় মুড়িগঙ্গা নদী। সেতু না হওয়ার কারণে পর্যটকদের কাছে গ্রহণযোগ্যতা বাড়েনি। কিন্তু মকরসংক্রান্তিতে গঙ্গাসাগর মেলায় লক্ষ-লক্ষ মানুষের ভিড়ে জমজমাট। হোটেল, সেবাশ্রম, হোকলা ঘরে থিকথিকে ভিড়। দিন দশেকের মেলা শেষ হলে আবারও যেই কে সেই। পরিস্থিতির বদল হলে সাগর দ্বীপের অর্থনৈতিক বদল আসবে। কিন্তু কীভাবে? 

দেশের মানুষের কাছে সম্ভাব্য ডেস্টিনেশন হতে চলেছে লাক্ষাদ্বীপ। মলদ্বীপ সরকার ভারতের প্রতি কুরুচিপূর্ণ মন্তব্যর পর থেকেই দুই দেশের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক তলানিতে এসে পৌঁছেছে। এমন একটি সময় আলোচনায় সাদা বালি ও নীল জলরাশি ঘেরা লাক্ষাদ্বীপ। কিন্তু সাগর দ্বীপ কেন ব্রাত্য হয়ে থাকবে প্রশ্ন তুলছেন সাগরবাসীরা। মুড়িগঙ্গা নদী জুড়ে বিশালাকার চড় পড়ার জেরে জেরবার এলাকার মানুষ। প্রায় নিয়ম করে ভেসেল আটকা পড়ছে। পরিস্থিতি এমন হাঁটু ডোবা জলে নেমে কোনক্রমে পার হয়ে পাড়ে ওঠেন এলাকার মানুষজন। কিন্তু মেলার সময় মুড়িগঙ্গা দিয়ে রীতিমতো ‘গ্রিন করিডর’ করে নিয়ে যাওয়া হয় কলকাতার সাংবাদিকদের। 

দেশ-বিদেশের মানুষের কাছে অত্যন্ত পবিত্র স্থান গঙ্গাসাগর তথা কপিলমুনির আশ্রম। বছরভর পুর্ণার্থীর আনাগোনা থাকে। কেবলমাত্র সেতু নির্মাণ না হওয়ার কারণে দ্বীপাঞ্চলের মানুষের দুর্দশা কাটছে না। মেলার সময় শত আয়োজন। কিন্তু মেলার সময় সাগরের বাসিন্দারাই কোন ঠাসা! কচুবেড়িয়া ঘাট থেকে সাগর অবধি হাজারো গাড়ি চললেও স্থানীয় বাসিন্দাদের জন্য বিভিন্ন বাসস্ট্যান্ডে গাড়ি থামে না। মেলার সময় চিকিৎসা করাতে যেতেও সমস্যার অন্ত থাকে না। 

সাগরদ্বীপ বছরের বিভিন্ন সময় প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের সম্মুখীন হয়। এছাড়া ভাঙ্গন সমস্যায় জর্জরিত। পান চাষের উপযুক্ত স্থান কিন্তু যোগাযোগ ব্যবস্থা সুগম না হওয়ায় সমস্যায় পান চাষীরা। ইন্টারনেট ও বিদ্যুৎ পরিষেবা সাগরদ্বীপে এখনো উজ্জ্বল হয়নি! মুড়ি গঙ্গার চড় জেগে ওঠার কারণে দিনের অধিকাংশ সময় ভেসেল চলাচলে ব্যাঘাত ঘটায়! রাজ্য সরকার মেলার সময় ড্রেজিং করে। কিন্তু এলাকার মানুষের দাবি, ড্রেজিং হয় মেলার সময়, বাকি সময় দুর্দশার শেষ থাকে না। ব্রিজ গড়ুক সরকার। তাহলেই পশ্চিমবঙ্গের ‘লাক্ষাদ্বীপ’ হয়ে উঠবে সাগরদ্বীপ। 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *