ছন্দে ফেরার লড়াই চালানো ‘লন্ডভন্ড’ পুরুষোত্তমপুরে ত্রাণ নিয়ে হাজির শুভংকর’রা

কল্যাণ অধিকারী

গ্রামের নাম পুরুষোত্তমপুর। হাওড়ার আমতা থেকে ১৪০ কিমি দূরের গ্রামটি পানীয় জল ও ত্রাণের অপেক্ষায়। এ কথা জানতে পেরে আমতা থেকে সাত সকালে রওনা দিয়ে মন্দারমণি ব্লকের গ্রামটিতে পৌঁছে ত্রাণ তুলে দিল একদল যুবক। ইয়াস প্রভাবে সব খুইয়ে ত্রাণের অপেক্ষায় থাকা মানুষের মুখে ত্রাণ দিয়ে একটু হাসি ফোটাল ওঁরা।

ইয়াস বিপর্যয়ের পর থেকেই পুরুষোত্তমপুর গ্রামটি ক্ষয়ক্ষতির নিরিখে চলে আসে সামনে। প্রায় তেরোশ পরিবারের বসবাস। তছনছ হয়ে গিয়েছে গ্রামের প্রায় সর্বত্র। বিধ্বস্ত গ্রামের মানুষের কাছে ছুটে গিয়েছে ওঁরা। শুভংকর বারুই আরও ৭ যুবককে নিয়ে তৈরি করেছে একটি সংগঠন। মূলত বিপর্যয়, রক্তের ভাব, করোনাকালে অক্সিজেনের সমস্যা সহ বিভিন্ন বিষয় এলাকার মানুষের পাশে দাঁড়াতেই সংগঠনটি গড়েছে শুভংকর। নাম দিয়েছে ‘আমতা আশার আলো’। ছোট হাতি গাড়িতে করে শুকনো খাবার, পানীয় জল, স্যানিটারি ন্যাপকিন ভরে সকাল ৬’টায় রওনা দেয় সকলে। সাড়ে ১০টায় পৌঁছে যায় পূর্ব মেদিনীপুরের ‘লন্ডভন্ড’ গ্রাম পুরুষোত্তমপুর। যেদিকে চোখ যায় শুধুই দুর্ভোগ আর হাহাকার। পানীয় জল সমস্যায় জর্জরিত গ্রামের মানুষ। ভাঙাচোরা রাস্তা আর লন্ডভন্ড গ্রামের মানুষের কাছে পৌঁছে যায় ওঁরা। ওঁদের দেখেই কলসি, প্ল্যাস্টিকের বালতি নিয়ে হাজির হন গ্রামবাসীরা।

শুভঙ্কর জানান, বিধস্ত গ্রামের এক হাজার মানুষের বাড়িতে-বাড়িতে গিয়ে আমরা শুকনো খাবার, পানীয় জল, স্যানিটারি ন্যাপকিন তুলে দিয়েছি। বিপর্যয়ের ক’দিন পরেও গ্রামের মানুষদের মনে সেদিনের ভয় রয়ে গিয়েছে। সমুদ্রের জল প্ল্যাবিত করেছে সবকিছু। টিউবওয়েল থেকে বেরিয়ে আসছে নোনা জল, সঙ্গে নোংরা। খুব সমস্যার মধ্য দিয়ে রয়েছেন এলাকার মানুষজন। আমরা জানতে পেরেই চলে আসি এই গ্রামে। ওঁনাদের পাশে থাকার বার্তা দিয়েছি।

ইয়াস চলে গিয়েছে। তারপর থেকেই গ্রামের মানুষ শুরু করেছে ছন্দে ফেরার লড়াই। গ্রামে পানীয় জলের সমস্যা, ত্রাণের জন্যও তাকিয়ে থাকা। দুর্যোগ যেন ওঁদের কাছ থেকে দূরে সরতেই চাইছে না। এমন একটি সময়ে শুকনো খাবার, পানীয় জল, স্যানিটারি ন্যাপকিন নিয়ে হাজির শুভংকর’রা। ওঁদের দেখে ঘরের ছাউনি ভেঙে পরে অপরিস্কার উঠোনে দাঁড়িয়ে পঁচাত্তরের বৃদ্ধা শ্যামলী ঘোষ সহ কয়েকশো গ্রামবাসী। ছন্দে ফেরার লড়াইয়ে আরও অনেক শুভংকরদের প্রয়োজন তা ওঁরা বুঝে গিয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *