বিষাক্ত জলের গ্রাম, এখন জেলার শুদ্ধ পানীয়জলের ঠিকানা
রাজন্যা নিউজ ব্যুরো সিউড়ি
একসময় যাদের বাড়িতে জল মানেই লালচে দাগ, ধাতব স্বাদ আর পেটের ব্যথা— আজ তারা গর্ব করে বলছে, “আমাদের গ্রামে এখন নিজস্ব পানীয়জল আছে।” একটা নীল রঙের কল খুলতেই স্বচ্ছ জলের ধারা। ব্যাগ কাঁধে নিয়ে বারো বছরের উমা সাহা প্লাস্টিকের বোতলে সেই জলই ভরছে। আশপাশে ছোটরাও সবাই স্কুলে যাওয়ার আগে একই কাজ করছে।
বীরভূমের সিউরির কাছে মহম্মদবাজার ব্লকের ছোট্ট গ্রাম রসপুর। প্রায় তিনশোটি বাড়ি, দু’হাজারের কিছু বেশি মানুষের বসতি। ওঁরাও সম্প্রদায়ের এই মানুষগুলো প্রজন্মের পর প্রজন্ম কাটিয়েছেন বিষাক্ত জলে। গ্রামের আটটি টিউবওয়েলেই মিশে ছিল আয়রন, আর্সেনিক, আর নানা ক্ষতিকর ধাতু।
এপ্রিলের পর পরিস্থিতি বদলাতে শুরু করে। চালু হয় এক নতুন আল্ট্রাফিলট্রেশন জলশোধন প্রকল্প— যার কল্যাণে রসপুরের মানুষ আজ প্রথমবারের মতো নিরাপদ পানীয়জল পাচ্ছেন।
চম্পা সাহা, গ্রামের এক প্রবীণ বাসিন্দা। তাঁর কথায়, “বছরের পর বছর টিউবওয়েলের জল খেয়ে পেটের ব্যথা, চামড়ার রোগ, নানা অসুখ হয়েছে। বাজারের জল কিনে খাওয়ার সামর্থ্য ছিল না। তাই সেই বিষাক্ত জলই খেতে হত, বাধ্য হয়ে। এখন আর সেই কষ্ট নেই।”
গ্রামের ৫০০ বর্গফুট জমির উপর তৈরি হয়েছে এই জল পরিশোধন কেন্দ্র। গভীর নলকূপ থেকে তোলা ভূগর্ভস্থ জল প্রথমে বালি ও কয়লার স্তরে ছেঁকে, পরে মেমব্রেন ও অতিবেগুনি রশ্মিতে পরিশোধিত হয়। এক হাজার লিটারের ট্যাঙ্কে সেই জল জমে, আর সেখান থেকেই একটি কমিউনিটি ট্যাপের মাধ্যমে গ্রামবাসীরা বোতল, কলসি বা ক্যান ভরছেন দিনে দু’বার করে।
স্বাধীনতার পর প্রায় আট দশক ধরে রসপুরে নিরাপদ জলের দেখা মেলেনি। একসময় গ্রামের কুয়োগুলো শুকিয়ে যায়, তার জায়গা নেয় টিউবওয়েল, কিন্তু সেগুলিও পরে বিষাক্ত জলে ভরে ওঠে।
স্থানীয় বাসিন্দা রেখার কথায়, “আমরা জানতাম এই জল ভাল নয়। তবুও বিকল্প ছিল না। প্রতিদিন অনেকটা পথ হেঁটে জল আনতাম। এখন আর সেই ঝামেলা নেই।”
রেখার বাড়ির পাশেই আজ দাঁড়িয়ে আছে সেই আধুনিক পরিশোধন কেন্দ্র। তিনি বলেন, “এটা আমাদের জীবনের সবচেয়ে বড় আশীর্বাদ। এই জল শুধু পান করার জন্যই ব্যবহার হয়। আমরা নিজেরাই এর পাহারা দিই, যাতে অপচয় না হয়।”

