মৌমাছি খেদানো দক্ষ কর্মী নেই! পড়ে যাওয়া গাছ কাটতে নাস্তানাবুদ প্রশাসন
কল্যাণ অধিকারী
প্রশাসনের কাছে অভিজ্ঞ কর্মীর অভাব ঘন্টার পর ঘন্টা সমস্যায় ফেলতে পারে। তার শেষ উদাহরণ দেখল গ্রামীণ হাওড়ার জয়পুর থানার ধাঁইপুর গ্রামের একটি ঘটনা। রাস্তায় বিদ্যুতের হাইটেনশন লাইনে ভেঙে পড়ে একটি প্রাচীন অশ্বত্থ গাছ। তা কাটতে গিয়েই সমস্যা কোথায় পৌঁছাতে পারে তা হাড়েহাড়ে টের পেলেন প্রশাসনের কর্তারা।
ঘটনার সূত্রপাত শনিবার বিকেল সাড়ে পাঁচটায়। বৃষ্টি শুরু হয়েছে ধাঁইপুর সহ বিস্তীর্ণ এলাকায়। ক্রমশ বৃষ্টির বেগ বাড়তে থাকে। গাড়ি চলাচল কমতে থাকে আমতা-ঝিকিরা সড়কে। তখনি একটি শতাব্দী প্রাচীন বিশাল অশ্বত্থ গাছ হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ে রাস্তার ওপর। গাছটির অর্ধেক অংশ আটকে যায় হাইটেনশন লাইনের তারে। ট্রান্সফরমারে বিকট আওয়াজ হয়ে বিদ্যুতের তারে আগুন লেগে যায় এমনটা স্থানীয়রা জানিয়েছেন। বৃষ্টির মধ্যেই রাস্তার ধারে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষজন ছোটাছুটি করতে থাকেন। খবর যায় জয়পুর থানায় ও সেহাগোড়ি বিদ্যুৎ দফতরে। এসে পৌঁছান পুলিশ কর্তারা। হাজির হন বিদ্যুৎ দফতরের কর্মীরাও। হাইটেনশন লাইনে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন করে দেয়। ততক্ষণে দু’দিকে গাড়ির লাইন লাগতে শুরু করে দিয়েছে। এরপরেই শুরু সমস্যার।

গাছটির ওপরের দিকের অংশে ছিল একটি মৌমাছির চাপ। যদিও স্থানীয়দের দাবি ডাঁশ চাপ। কিন্তু কে তাড়াবে তাদের। দক্ষ কর্মী না থাকায় সমস্যায় পড়েন পুলিশ কর্তারাও। বিদ্যুৎ কর্মীদের কাছেও এমন দক্ষ কেউ ছিলেন না। মৌমাছি খেদানো লোকের খোঁজাখুঁজি শুরু হয়। এভাবেই ঘন্টাখানেক কেটে যায়। একটা সময় দেখা যায় খোদ ওসি অভিষেক রায় গ্রামবাসীদের সঙ্গে কথা বলতে। তাঁর কথা ফেলতে না পেরে এগিয়ে আসেন গ্রামের মানুষজন। কেরোসিন, পোড়া মোবিল, কাপড়, বাঁশ জোগাড় করা হয়। কোনপ্রকার আপতকালিন নিরাপত্তা না নিয়েই দোকানের চাতালে ওঠেন এক ব্যক্তি। বাঁশের ডগায় কাপড় ও ডালপালার কুন্ডুলিতে কেরোসিন, মোবিল জ্বেলে মৌমাছি খেদানো শুরু হয়। এভাবেই আরও আধঘন্টা কেটে যায়। ততক্ষণে অন্ধকার নেমে এসেছে। এরপর শুরু হয় গাছ কাটার পালা। রাত সাড়ে সাতটার পর গাছ কেটে নামানো হয়। ছিন্নভিন্ন হয়ে যায় বিদ্যুতের তার। রাস্তা পরিষ্কার করে গাড়ি চলাচল শুরু হয় আরও আধ ঘন্টা পর। ততক্ষণ অবধি যানজটে আটকে থাকে গাড়ির লম্বা লাইন।
ঘটনাস্থলে এসে পৌঁছান আমতা-২ ব্লক জয়েন্ট বিডিও সৌমিক সিংহ। ঘটনার প্রথম থেকে এলাকায় ছিলেন ওসি অভিষেক রায় ও তাঁর টিম। ছিলেন থলিয়া গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান ফরজিলা মন্ডল। কিন্তু ছিল না মৌমাছি খেদানো দক্ষ কর্মী। তার অভাব হাড়েহাড়ে টের পেলেন প্রশাসনের কর্তারা। যদিও পঞ্চায়েত ও প্রশাসনের কাজকে দরাজ সার্টিফিকেট দিয়েছেন সৌমিক সিংহ। তাঁর কথায়, ‘আকস্মিক ঘটনায় দ্রুততার সঙ্গে কাজ করেছেন পঞ্চায়েত ও প্রশাসন’। যদিও স্থানীয়দের দাবি ‘দক্ষ কর্মী না থাকায় মৌমাছি খেদিয়ে গাছ কাটতে পারেনি প্রশাসন। দীর্ঘ সময় যানজটে আটকা পড়ে খেসারত দিতে হল কয়েকশো মানুষকে। প্রায় চারঘন্টা বিদ্যুৎ ছিল না বেতাই থেকে সেহাগোড়ী অবধি বিস্তীর্ণ এলাকায়’।