জৌলুস হারিয়েছে একসময়ের স্বপ্নের উৎসবের স্মৃতি হাতড়াচ্ছে হাওড়া
কল্যাণ অধিকারী
শিল্পের দেবতা বিশ্বকর্মার আজ পুজো। কিন্তু হাওড়া শহরজুড়ে আগেকার পুজোর জৌলুস এখন বড়ই ফিকে। কলকারখানা ও ব্যবসা-বাণিজ্যের গুরুত্বপূর্ণ নগর দাসনগরে মঙ্গলবার দেখা গিয়েছিল আর পাঁচটা দিনের মতো ছবি। কোথাও-কোথাও পুজোর জন্য মন্ডপ বাঁধা হয়েছে। তবে কারখানার ভিতরকার ছবি একদম ভিন্য। একদিন বাদেই শিল্পের দেবতার পুজো কিন্তু সেভাবে কোন প্রস্তুতির দেখা নেই। বিকালে প্রতিমা আনা হবে বলে জানিয়েছিলেন শ্রমিকরা। তবে মালিকপক্ষের মধ্যে পুজো ঘিরে বাড়তি উল্লাস চোখে পড়েনি।বুধবার সকাল থেকে পুজোর চিত্র সর্বত্র। পুরোহিতকে খুঁজতে হন্যে সকলে।
হুগলি নদীর পূর্ব দিকে কলকাতা ও পশ্চিম তীরে অবস্থিত কলকারখানার শহর হাওড়া। এখানেই ইংরেজ শিল্পপতি হেনরি উইলিয়াম পর্যন্ত গড়ে তুলেছিলেন জিকেডব্লিউ লিমিটেড-এর মতো কারখানা। এখানেই ছিল শিবপুরে গেস্টকিন, বার্ন স্ট্যান্ডার্ড মতো বৃহৎ শিল্পের কোম্পানি। এছাড়াও জাহাজ নির্মাণ, ইঞ্জিনিয়ারিং, এবং টেক্সটাইল শিল্প উল্লেখযোগ্য। কিন্তু হুগলি নদী দিয়ে বহমান স্রোতের মতো হারিয়ে গিয়েছে। এখন হাওড়ায় শিল্পের ‘কঙ্কালসার দশা’! একের পর এক বড় শিল্পের কারখানা বন্ধ। ছোট ও মাঝারী কারখানা কোনোক্রমে চালু করে রেখেছে মালিকপক্ষ। একিই অবস্থা জুটমিল শিল্পে। হঠাত করেই মিলের গেটে সাসপেনশন অফ ওয়ার্ক-এর নোটিশ ঝুলিয়ে দেন। শিল্পের এমন করুণ দশা কি করে হল? বিভিন্ন মত উঠে এসেছে।
বিরোধীদের অভিযোগ, বামেদের সময় যে জৌলুস ছিল এই সরকারের আমলে শিল্প ও কারখানা থাকলেও কাজ হয় না। বহু কারখানা ঢেকেছে জঙ্গলে। অনেকেই বলছেন, শিল্প-কারখানা থাকলেও, তা থেকেও সে ভাবে বরাত মিলছে না। তার উপর দাদাগিরি সহ বিভিন্ন উৎপাত মালিকপক্ষকে বিরক্তের মধ্যে ফেলছে। বাম সরকার জগৎবল্লভপুরে একটি ক্লাস্টার গড়ার যে প্রক্রিয়া শুরু করেছিল তা অচিরেই শেষ হয়েছে। জরি শিল্প ও সোনা শিল্পের সঙ্গে জড়িত কর্মচারীরা কাজ না পেয়ে বাধ্য হচ্ছেন রাজ্য ছেড়ে চলে যেতে। যদিও বিরোধীদের এই দাবি উড়িয়ে দিয়েছে শাসকদলের নেতা-কর্মীরা। তাঁদের দাবি, বামেরা শূন্য হয়েছে কেন সেটা আগে বলুক। কৃষকের জমি লুটপাট চালিয়ে মালিকের হাতে তুলে দেওয়ার জন্য আজ ওঁরা শূন্য। ১৬ নং জাতীয় সড়কের ধারে দেখলে বোঝা যাবে শিল্প কাকে বলে। কোনা থেকে দেউলটি শিল্পের চিত্র বদলেছে।