ওঁদের দায়িত্ব পালনে ওঁরা-ই যথেষ্ট
কল্যাণ অধিকারী
ঘড়িতে তখন এগারোটা। ফাঁকা রাস্তার মাঝে মোড় মাথায় পুলিশের গাড়ি থেকে কাউকে নামানোর চেষ্টা চলছে। বাইক থামিয়ে এগিয়ে যেতেই দেখতে পেলাম পুলিশের গাড়ির চালকের ডান হাতের মাস্কেল টেনডন খুলে ঘুরে গেছে। অসহ্য যন্ত্রণায় কাতর তিনি। দুই পুলিশ আধিকারিক সঙ্গে আমি ধরাধরি করে পাশেই ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রে নিয়ে যাই। বিএমওএইচ কে ফোন করতেই একবাক্যে সাহায্যে এগিয়ে এলেন।
ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রে বহু দূরদূরান্ত থেকে মানুষজন এসেছেন র্যাপিড টেস্ট করাতে। একি সঙ্গে ভ্যাকসিন নিতে। আমরা এমারজেন্সি তে চালক কে নিয়ে বসে। চিকিৎসক মাস্কেল টেনডন পুনঃস্থাপিত করার চেষ্টা করছেন। বললেন বেডে শোয়ানোর প্রয়োজন। কাউকে ডাকতে হবে না স্ট্রেচার আমি এনে দিচ্ছি বলেই ছুটলেন এক সিভিক। স্ট্রেচার আনলেও চিকিৎসক নিজ হাতে চালকের মাস্কেল টেনডন যথাস্থানে স্থাপন করলেন।
একটু আগেও যন্ত্রণায় কাতর ছিলেন। বমিও করে ফেলেন চালক। দশ মিনিটের মধ্যেই একদম শান্ত। ডান হাত ধরে বসে চিকিৎসকের পরামর্শ শুনছেন। কিছু ওষুধ লিখে দিলেন তিনি। পাশে দাঁড়ানো পুলিশ আধিকারিকদের জুতোয় বমির ছিটে। চালক কিছু বলার আগেই ‘এসব নিয়ে ভেব না তো, তুমি সুস্থ হলেই স্বস্তি’। বাইরে তখন আকাশ ছেয়ে গেছে কালো মেঘে। ভিতরে মানবিকতার বিশুদ্ধ উদাহরণ।
সুস্থ হওয়ায় চালক সহ পুলিশ আধিকারিকরা ধন্যবাদ জ্ঞাপন করে কর্তব্য পালনে চলে গেলেন। কিন্তু বাইক নিতে গিয়েই প্রবল বেগে বৃষ্টি নামল। ভ্যাকসিন দেওয়া রুমেই দাঁড়িয়ে পড়তেই হল। কয়েকশো মানুষ তখন এদিক-ওদিক ছাউনির তলায়, স্বাস্থ্য কেন্দ্রের এক তলার বারান্দায় ভিড় করেছেন। কারেন্ট না থাকায় আলোছায়া ঘরে মহিলা সিভিক কর্মী স্যানিটাইজার বোতল হাতে দাঁড়িয়ে। মাথায় নীল রঙের ইলাস্টিক এজ মেডিকেল হেড ক্যাপ। সুন্দর ভাবে মানুষজনকে সামাজিক দূরত্ব মেনে চলার কথা বলছেন।
বহু মানুষ যারা কিছু সময় আগেও র্যাপিড অ্যান্টিজেন টেস্ট করানোর লাইনে ছিলেন, কিছুটা দূরে ভ্যাকসিন নেবার অপেক্ষায় ছিলেন বৃষ্টির কারণে সবাই তখন মিলেমিশে একাকার। কিছু মানুষজন এখনও করোনা বিষয়টিকে হেলায় উড়িয়ে চলেছেন। কাশি, হাঁচি, মাথাব্যথা ও জ্বর জ্বর ভাব হলে তবেই মনে পড়ছে করোনার কথা। বৃষ্টি হচ্ছে করোনার তোয়াক্কা না করে গায়ে গা ঠেকিয়ে দাঁড়িয়ে। মহিলা সিভিক কর্মী ‘কে আর তার কথা শোনে’!
বৃষ্টি কিছুটা কমতে একটা প্ল্যাস্টিক চাইতেই মহিলা স্বাস্থ্যকর্মী খেঁকিয়ে উঠলেন। মনে হল ভ্যাকসিন চেয়েছি বোধহয়। মহিলা সিভিক কর্মী বললেন একটু ওইদিকে দেখুন পাবেন। ওইদিকে না গিয়ে বৃষ্টির মাঝেই ব্যাগ কাঁধে বাইকের হ্যান্ডেল ধরে রাস্তা ধরলাম। ওদিকে যে খবর আমার অপেক্ষায়।
ধন্যবাদ বিএমওএইচ স্যার, পুলিশ আধিকারিক এবং সিভিক কর্মীদের।