বিজেপি ও নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে উলুবেড়িয়ার সভায় ‘রণংদেহী’ তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা

কল্যাণ অধিকারী

বৃহস্পতিবার নন্দীগ্রামে ভোট। প্রার্থী স্বয়ং তিনি। ঠিক তার আগের দিন বিজেপি ও নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে ‘রণংদেহী’ তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এদিন সিঙ্গুরের রতনপুরে জনসভা করে হেলিকপ্টারে আসেন উলুবেড়িয়ার পাঁচলা রঘুদেবপুরে। তপ্ত দুপুরে মাঠে তখন তিল ধারণের জায়গা নেই। দিদির হেলিকপ্টার ১৬ নং জাতীয় সড়কের উপর আকাশে দেখা দিতেই ‘দিদি দিদি’ আওয়াজ তুললেন জনসভায় আসা হাজার হাজার জনতা।

নন্দীগ্রামে আমার উপর হামলা হল কোন একশন নিয়েছে কমিশন প্রশ্ন তুললেন
আর তো এক মাস ভোট শেষ, তারপর বহিরাগত গুন্ডা, বহিরাগত পুলিশরা যাবে কোথায় উলুবেড়িয়ায় জনসভায় মমতা

বক্তব্যের শুরুতে গ্রামীণ হাওড়ার মানুষের প্রধান সমস্যা বন্যা তা নিয়ে তিনি যে বড়সড় প্রজেক্ট গ্রহন করেছেন তা তিনি মাইক হাতে জানান, তিনি বলেন, নিম্ন দামোদর এলাকার জন্য ৩ হাজার কোটি টাকার প্রোজেক্ট করা হচ্ছে। এতে করে লোয়ার দামোদর এলাকা মেদিনীপুর, হাওড়া, হুগলী, বাঁকুড়া, বর্ধমান প্রজেক্ট করা হচ্ছে। সেতু, ইরিগেশনের সেতু, নিচু তিলার মাটি ভরাট সহ নিম্ন দামোদর এলাকার বন্যা নিয়ন্ত্রণে কাজ হচ্ছে। এরজন্যে ৩হাজার কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন উলুবেড়িয়া হচ্ছে শিল্প শহর। হাওড়া জেলা জুড়ে শিল্পের জোয়ার এসেছে। উলুবেড়িয়া, বালটিকুরি, বাউড়িয়া, সাঁকরাইল সহ মোট ১৫টি শিল্প তালুক তৈরি করা হয়েছে। আরও ৪টি শিল্প তালুক তৈরি করার কাজ চলছে। উলুবেড়িয়া গ্রোথ সেন্টার, সাঁকরাইল ফুড পার্ক ও পলি পার্ক হয়েছে, অংকুরহাটি জুয়েলারি পার্ক করা হয়েছে। ২৫ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ হয়েছে। এছাড়াও অ্যামাজন ও ফ্লিপকার্টের জন্য লজিস্টিক হাব গড়ে তোলা হয়েছে। ২১ হাজার ছেলেমেয়ের চাকরি হবে। উদয়নারায়ণপুরে তাঁতিদের জন্য তাঁত হাট তৈরি হচ্ছে।

এরপরেই তিনি বলেন মহিলাদের জন্য যারা ঘরে থাকেন তাঁদের জন্য লক্ষ্মী ভান্ডার দেব। ৫০০-১০০০ টাকা দেব। মমতার এই ঘোষণায় সভাস্থল রীতিমত হাততালিতে ফেটে পড়ে সভাস্থল। এরপরেই বিজেপিকে কটাক্ষ করে বলেন, খেলা হবে। ‘আমরা যেটা করি সেটা বলি, আমরা যেটা করিনা সেটা বলি না। আমি বিজেপির মত মিথ্যাবাদী নই’। বিজেপি ভারতবর্ষের জঘন্য পার্টি। বলে কি-না ১৫ লক্ষ টাকা করে সবার একাউন্টে দেবে, দিয়েছে? জনতার উদ্দেশ্যে প্রশ্ন তোলেন তিনি। গ্যাসের দাম কত মা বোনেরা, কেরোসিনের দাম কত ? বিনা পয়সায় চাল দেব আর হাজার টাকার গ্যাসে ফোটাবে বিজেপিকে বলুন। এক হাজার টাকার গ্যাস আর ভোটে জেতার জন্য দুশো টাকা ক্যাস। টাকা দিলে নিয়ে নিন। আর ওঁদের এস করে দিন।

এরপরেই ইলেকশন কমিশনকে দুষে তিনি বলেন, ইলেকশন কমিশন বাপরে বাপ যেন বিজেপির মণ্ডল কমিটির এক একটা সভাপতি। ইলেকশন কমিশনকে সন্মান করি। বিজেপি যা বলছে তাই শুনতে হবে প্রশ্ন তোলেন মমতা। তিনি বলেন, নন্দীগ্রামে আমার উপর হামলা হল কোনও একশন নিয়েছে কমিশন নেয়নি। ইলেকশন কমিশন বিজেপি ছাড়া কিছুই বোঝেন না। এরপরেই তিনি বলেন, আর তো এক মাস। ভোট শেষ। তারপর বহিরাগত গুন্ডা, বহিরাগত পুলিশরা যাবে কোথায়। বিজেপির আঁচলে প্রশ্ন তোলেন তিনি। এরপরেই তীব্রভাবে আক্রমণ শানিয়ে তিনি বলেন, এখানে শুধু তৃণমূলের পতাকা ছিঁড়ে দেওয়া হচ্ছে, ফ্লেক্স খুলে দেওয়া হচ্ছে। শুধু বিজেপির কথা শুনছে। মনে রাখুন এটা বাংলা, আমি ছেলেদেরকে একবার বলে দিলে এক সেকেন্ডে চাটিয়ে বের করে দেবে। কিন্তু আমি এসব করি না। আমি দায়িত্বশীল লোক। শান্তিপূর্ণ ভোট চাই। গণতান্ত্রিক ভোট চাই। এখানকার আইনকানুন সমস্ত ইলেকশন কমিশন কেড়ে নিয়েছে। যেন মনে হচ্ছে রাষ্ট্রপতি শাসন করে ভোট করছে।

ভাবুন একবার ডিআইজি বদলি করে থানার ওসি করে দেওয়া হচ্ছে। ভাবুন কত বড় অসন্মানের।এই লোকগুলো দিনের পর দিন কাজ করে তবেই একটা পদ পেয়েছে। এই অসন্মানের জবাব আমরা দেব। এর বদলা আমরা নেব। বিজেপির হোম মিনিস্টার ইলেকশন কমিশন চালাচ্ছে। কেন? যেখানে ইলেকশন শেষ হয়ে গিয়েছে সেখানেও গুন্ডারা বসে রয়েছে! কেন দেখছেন না ইলেকশন কমিশন। টাকার ভান্ডার নিয়ে সব বসে রয়েছে। কই আগে তো এমন হয়নি। এখন হচ্ছে এসব কেন? বুথের ভোটার না হলেও হওয়া যাবে পোলিং এজেন্ট, কমিশনের নয়া নিয়ম নিয়েও প্রশ্ন তোলেন মমতা। কেন্দ্রীয় বাহিনীকে নিয়েও প্রশ্ন তোলেন তিনি।

রঘুদেবপুরে জনসভার মধ্য দিয়ে মমতা চারটি বিধানসভা কেন্দ্রের ভোট প্রচার করলেন। পাঁচলা কেন্দ্রের প্রার্থী গুলশান মল্লিক, উলুবেড়িয়া পূর্ব কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী বিদেশ বসু, দক্ষিণ কেন্দ্রের প্রার্থী পুলক রায় এবং উত্তর কেন্দ্রের প্রার্থী ডাঃ নির্মল মাজির সমর্থনে। সমস্ত কেন্দ্রের প্রার্থী ছাড়াও এদিনের মঞ্চে ছিলেন বাগনান কেন্দ্রের প্রার্থী অরুণাভ সেন (রাজা)। সাঁকরাইল বিধানসভার প্রার্থী প্রিয়া পাল মমতার পা ছুঁয়ে প্রণাম করে আশীর্বাদ গ্রহন করেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *