ট্রাম্প ট্যারিফের ধাক্কা, ছাঁটাই শুরু কাজ হারাবেন ২ লক্ষ স্বর্ণশিল্পী

রাজন্যা নিউজ ব্যুরো

২০৩৮ সালের মধ্যে ভারতের বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতিতে পরিণত হওয়ার স্বপ্ন সত্যি হবে কি? ভারত থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে রফতানি করা নানাবিধ পণ্যের উপর ডোনাল্ড ট্রাম্প ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করার ফলে উৎসবের মরসুমের মুখে শ্রমিক-কর্মচারীদের জন্যে নতুন আরেক দুঃসংবাদ। রত্ন ও অলঙ্কার শিল্পের সঙ্গে যুক্ত ১ লক্ষ ৭৩ হাজার কারিগর কাজ হারিয়ে এবার পুরোপুরি বেকার হয়ে পড়বেন বলে আশঙ্কা। একইভাবে মার্কিন মুলুকে রফতানির উপর মূলত নির্ভরশীল সামুদ্রিক খাদ্য, চিংড়ি মাছ রফতানি শিল্প এবং পোশাক শিল্পের সঙ্গে যুক্ত লক্ষ লক্ষ শ্রমিকও কাজ হারাতে চলেছে।

করোনা পরিস্থিতিতে লক্ষ লক্ষ ভারতীয় নাগরিক কাজ হারিয়েছেন বেসরকারি ক্ষেত্রে নির্বিচারে চলা ছাঁটাইয়ের দরুণ। ফের তার চেয়েও ভয়াবহ সঙ্কট দেখা দিতে চলেছে। জেম অ্যান্ড জুয়েলারি এক্সপোর্ট প্রোমোশন কাউন্সিলের কর্তা কিরীট বনসালি বলেছেন, ‘ভারত থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ১০ বিলিয়ন ডলারের রত্ন ও অলঙ্কার রফতানি করা হয়। ট্রাম্প অত্যধিক শুল্ক আরোপ করার ফলে এবার রফতানি ৭৫ শতাংশ হ্রাস পেতে চলেছে। স্বভাবতই এর ফলে বিপুল অঙ্কের ব্যবসা মার খাবে।’
সূত্রের খবর, কেবল কারিগররাই নন, রত্ন ও অলঙ্কার পরিবহণের সঙ্গে যুক্ত যানচালক এবং ওই সামগ্রীগুলি সরবরাহের তদারকির কাজে যুক্ত বহু কর্মী বেকার হওয়ার মুখে। এর দরুণ ভারতে এবার কেবল অর্থনৈতিক দুরবস্থা নয়, একইসঙ্গে দেশের মাটিতে রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলা তথা নৈরাজ্য বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা ওয়াকিবহাল মহলের। উল্লেখ্য, এতে লাভবান হবে ভারতের প্রতিযোগী বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা, ভিয়েতনাম, দক্ষিণ কোরিয়ার মতো দেশের নাগরিক রফতানিকারকরা। কেননা এই দেশগুলি থেকে এখন মার্কিন মুলুকে রত্ন ও অলঙ্কার রফতানিতে ধার্য শুল্ক ১৫ থেকে ২০ শতাংশ।

জেম অ্যান্ড জুয়েলারি এক্সপোর্ট প্রোমোশন কাউন্সিল সূত্রের খবর, রত্ন ও অলঙ্কার শিল্পে দক্ষ ও স্বল্প দক্ষ কর্মী মিলিয়ে ৫০ লক্ষাধিক শ্রমিক, কর্মচারীর জীবন-জীবিকার সংস্থান হয়। গত আগস্টে ট্রাম্প ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করার আগে আশা করা গিয়েছিল, ২০২৭ সালের মধ্যে ভারতের রত্ন ও অলঙ্কার শিল্প ১০০ বিলিয়ন ডলারে গিয়ে পৌঁছবে। এখন সে আশায় গুড়েবালি।
রত্ন ও অলঙ্কার শিল্পের হাব রয়েছে গুজরাট, মহারাষ্ট্র, রাজস্থানে। বাংলার হুগলি জেলার কুমিরমোড়, হাওড়ার ডোমজুড় এবংপশ্চিম মেদিনীপুর জেলার দাসপুরের বাসি¨া বহু মানুষ স্বর্ণালঙ্কার শিল্পে কারিগর হিসেবে কাজ করেন। ঘরে ঘরে কাজ হয়। সূত্রের খবর, এই কারিগররাও এবার কাজ হারাতে শুরু করেছেন। ওঁদের কেউ কেউ টোটো কিংবা অটো চালাচ্ছেন। বাকিরা বিকল্প জীবিকার খোঁজে হন্যে হয়ে ঘুরছেন।
স্বর্ণ ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, সোনার গয়নার উপর কেন্দ্রীয় সরকার ৫ শতাংশ জিএসটি আরোপ করার পরে দেশীয় স্বর্ণশিল্প বিপন্ন হতে শুরু করে। ট্রাম্পের শুল্কনীতি তাতে শেষ পেরেকটি ঠুকেছে। এদিকে বাজারে সোনার দাম হু-হু করে বাড়ছে। এখন ১০ গ্রাম সোনার দাম ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকা। শীঘ্রই ১০ গ্রাম সোনার দাম ২ লক্ষ টাকা ছুঁতে পারে বলে পূর্বাভাস। উৎসবের মরসুমে দেশীয় বাজারে রত্ন কিংবা অলঙ্কার খানিক বিক্রি হলেও এরপর কী হবে, তা ভেবে ব্যবসায়ীরা কূল পাচ্ছেন না।

গত আগস্টে ট্রাম্প ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করার পরে জেম অ্যান্ড জুয়েলারি এক্সপোর্ট প্রোমোশন কাউন্সিল লক্ষ লক্ষ কারিগরের জীবিকা যাতে মার না খায়, এজন্যে কেন্দ্রকে ব্যবস্থা গ্রহণের আর্জি জানায়। একথা জানালেন কাউন্সিলের এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর সব্যসাচী রায়। যদিও এনিয়ে এখনও কেন্দ্রীয় বাণিজ্য মন্ত্রক দিশা দেখাতে ব্যর্থ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *