জলমগ্ন উদয়নারায়ণপুর, আমতার বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি, বাড়ছে আতঙ্ক
কল্যাণ অধিকারী, এডিটর রাজন্যা নিউজ
জলস্তর ক্রমশ বাড়ছে। যে কোনও সময় দামোদরের বাঁধ ভেঙে যাওয়ার আশঙ্কা ছিল। সেই আশঙ্কা সত্যি করেই রবিবার উদয়নারায়ণপুর ব্লকের হরিহরপুর, টোকাপুর শিবানীপুর-সহ একাধিক জায়গায় বাঁধ ভেঙ্গে হুহু করে জল ঢুকছে গ্রামে। উদয়নারায়ণপুর-তারকেশ্বর রাজ্য সড়ক জলের তলায়। উদয়নারায়ণপুর হাসপাতাল, কলেজ, বাজার সব জলমগ্ন। উদয়নারায়ণপুরের বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগে প্রশাসন।
মাস দেড়েক আগেই দামোদর নদের জল ঢুকেছিল এলাকায়। বিধায়কদের সঙ্গে বৈঠকে নদী বাঁধ গুলিকে মজবুত করার নির্দেশ দিয়েছিলেন জেলাশাসক মুক্তা আর্য এমনটাই সূত্রের খবর। কিন্তু দামোদর কোনকিছু বাধাই মানতে চায় না। বকপোতা, জঙ্গলপাড়া, শিবানীপুর, সুলতানপুর, হরাল, গজা সহ কুড়িটি গ্রামের বাসিন্দাদের কাছে নদীবাঁধ ভেঙে প্লাবনের কয়েক দশকের অভিজ্ঞতার আজও বদল হল না। বিধায়ক সমীর পাঁজা সকাল থেকে বিভিন্ন এলাকায় ছুটেছেন। কেউ বলছে দাদা আমাদের গ্রামের বাঁধটাও ভেঙ্গে গেল। আবার কারও উক্তি, দাদা বাড়িতে জল। তক্তায় বসে আছি ছেলেপুলেদের নিয়ে। এভাবেই দিনভর দৌড়ঝাঁপ করছেন বিধায়ক তথা ‘দাদা’ সমীর পাঁজা।
উদয়নারায়ণপুরের বাসিন্দা প্রিয়ম আদক বলেন “দামোদরের জল বেড়েই চলছে। এবারের পরিস্থিতি অত্যন্ত বিপদজনক। যেভাবে জলের স্রোত তাতে করে কোন জায়গায় কখন নদী বাঁধ ভাঙ্গবে কিছুই বোঝা যাচ্ছে না। একাধিক এলাকায় বাঁধে এখনও পর্যন্ত বালির বস্তা দিয়ে আটকে রাখা হচ্ছে। যে জল ধেয়ে আসছে তার কি হবে কিছুই বোঝা যাচ্ছে না।”

বানভাসি উদয়নারায়ণপুরের চকগড়া সহ একাধিক গ্রাম। উঁচু জায়গায় পৌঁছে গিয়েছেন গ্রামের মানুষজন। স্থানীয়দের কেউ কেউ বলছেন শনিবার রাত থেকেই জল ঝাঁপাচ্ছিল। প্রথম বাঁধ ভাঙ্গে ঠাকুরানীচক শাল বাগান এলাকায়। তখন প্রায় রাত সাড়ে ১২টার মতন বাজে। ওই জায়গা দিয়ে জল ঢুকে ঠাকুরানীচক, শিবানীপুর, চকগড়া, আকনা, জোঁকা সহ একাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়। সকাল থেকে একের পর এক নতুন গ্রাম ডুবতে থাকে। হাজার হাজার হেক্টর জমির ফসল জলের তলায়। এবারে অল্প বর্ষায় ডুবতে হয়েছে। পাশপাশি টানা বর্ষণে আবারও বানভাসী হতে হল। এইভাবেই কি জীবন সংগ্রাম চালিয়ে যেতে হবে ক্ষোভ গ্রামের মানুষদের একাংশের। লকডাউন তারপর কাজ যদিওবা শুরু হল আবারও বন্যা। উদয়নারায়ণপুরবাসীর কপালে কি শুধুই দুর্দশা লেখা প্রশ্ন তাঁদের।
উদয়নারায়ণপুরের বিধায়ক সমীর পাঁজা সাংবাদিকদের বলেন, ‘‘বন্যার্তদের সাহায্যের জন্য সমস্ত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। ইতিমধ্যে এলাকার ছ’হাজার মানুষকে নিরাপদ জায়গায় সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তাঁদের খাবারেরও ব্যবস্থা করা হয়েছে।’’
উদয়নারায়ণপুরের পাশাপাশি বন্যা পরিস্থিতি জটিল হচ্ছে আমতার। হাওড়া গ্রামীণের আমতা-১ ও ২ ব্লকের পরিস্থিতি আশানুরূপ নয়। রবিবার আমতার দ্বীপ অঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতি দেখতে কুলিয়া ঘাটে আসেন জেলাশাসক মুক্ত আর্য। ছিলেন রাজ্যের মন্ত্রী পুলক রায় আমতার বিধায়ক সুকান্ত পাল এবং দেলুয়ার হোসেন মিদ্যা সহকারি সভাপতি আমতা ২ পঞ্চায়েত সমিতি। তার আগে আমতা-২ ব্লকে একটি বৈঠক করেন জেলাশাসক। জিবি চিতনান গ্রাম পঞ্চায়েতের বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। রূপনারায়ণের জলের তোড়ে একাধিক গ্রামের রাস্তার উপর প্রায় এক মানুষ সমান জল। পানীয়জলের টিউবকল ডুবে যাওয়ায় সমস্যায় মানুষজন। সাহায্যে এগিয়ে এসেছেন বিধায়ক সুকান্ত পাল। আমতা-২ ব্লকে পানীয়জলের পাউচের গাড়ি আনা হয়েছে। জলবন্দি মানুষদের জন্য নৌকার ব্যবস্থা করা হয়েছে। পরিস্থিতির দিকে সর্বদা নজর রয়েছে জানান বিধায়ক সুকান্ত পাল।