তরুণী চিকিৎসক আত্মহত্যা কাণ্ড ময়নাতদন্তের ভুয়ো রিপোর্ট তৈরিতে চাপ
রাজন্যা নিউজ ব্যুরো:
শিক্ষার মতো স্বাস্থ্য ব্যবস্থারও কঙ্কালসার চেহারা তৈরি হয়েছে। সমাজের দায়িত্বশীল এই পেশায় নিযুক্ত ব্যক্তিরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। বিশেষ করে মহিলা চিকিৎসকরা। কখন যে কি হয়, এই আতঙ্কই এখন ভবিতব্য মহিলা চিকিৎসক থেকে শুরু করে মহিলা স্বাস্থ্যকর্মীদের ক্ষেত্রে। আর যখনই নির্যাতনের ঘটনা ঘটে তখনই রাজনৈতিক দলগুলি শকুনের মতো ঝাঁপিয়ে পড়ে রাজনৈতিক ফায়দা তোলার জন্য।
তবে চিকিৎসক নিগ্রহ কিংবা চিকিৎসক আত্মহত্যার ঘটনার পর তার সঠিক কারণ নিয়ে তদন্ত খুব একটা এগোয় না। কিছুদিন তদন্ত চলার পর ধামাচাপা পড়ে যায়। পাছে কেঁচো খুঁড়তে কেউটে বেরিয়ে পড়ে। যেমনটা হয়েছে মহারাষ্ট্রের সাতারায় সরকারি হাসপাতালের ক্ষেত্রে।
মহারাষ্ট্রে তরুণী চিকিৎসকের আত্মহত্যার ঘটনায় এবার চাঞ্চল্যকর অভিযোগ তুলল নির্যাতিতার পরিবার। মৃতার এক সম্পর্কিত ভাইয়ের অভিযোগ, ওই চিকিৎসককে ময়নাতদন্তের ভুয়ো রিপোর্ট তৈরি করতে বাধ্য করা হত। শুধু তাই নয়, ভুয়ো ফিট সার্টিফিকেট তৈরি করতেও চাপ দেওয়া হত ওই চিকিৎসককে।
গত বৃহস্পতিবার রাতে মহারাষ্ট্রের ফলটন উপ জেলা হাসপাতালে। গত বৃহস্পতিবার রাতে আত্মঘাতী হন ওই তরুণী চিকিৎসক। নিজের হাতের তালুতে লেখা সুইসাইড নোটে তিনি অভিযোগ করেন, পুলিশের একজন সাব ইন্সপেক্টর গত পাঁচ মাসে তাঁকে চার বার ধর্ষণ করে। অভিযুক্ত ওই পুলিশ অফিসারের নাম গোপাল বাদনে।
মৃত চিকিৎসকের ভাইয়ের অভিযোগ, সাতারা জেলার ফলটন উপজেলা হাসপাতালে দু’বছর আগে কাজে যোগ দিয়েছিলেন নির্যাতিতা চিকিৎসক। ওই সরকারি হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার ছিলেন তিনি। কিন্তু শুরু থেকেই তাঁকে প্রবল চাপের মধ্যে কাজ করতে হত। অভিযোগ, ময়নাতদন্তের রিপোর্টে অদল বদল করার জন্য ওই চিকিৎসককে চাপ দেওয়া হত। এমন কি, ভুয়ো ফিট সার্টিফিকেটও লিখিয়ে নেওয়া হত তাঁকে দিয়ে। অথচ যে রোগীদের নামে এই সমস্ত ভুয়ো রিপোর্ট তৈরি করা হত, তারা বহু ক্ষেত্রে হাসপাতালে উপস্থিতই থাকতেন না।
মৃতার পরিবারের আরও অভিযোগ, এর আগে দু’তিন বার এই অনিয়ম নিয়ে অভিযোগ করেছিলেন নির্যাতিতা চিকিৎসক। পুলিশের এসপি এবং ডিএসপি’কেও অভিযোগ জানান তিনি। তার পরেও কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
সরকারি হাসপাতালে তরুণী চিকিৎসকের এই আত্মহত্যার ঘটনায় মহারাষ্ট্রে বিশাল শোরগোল পড়ে গিয়েছে। অভিযুক্ত এসআই-এর বিরুদ্ধে শারীরিক নির্যাতন এবং মানসিক হয়রানির অভিযোগ তুলে গিয়েছেন মৃত চিকিৎসক। ঘটনা সামনে আসার পরই অভিযুক্ত এসআই’কে সাসপেন্ড করা হয়েছে। প্রশান্ত বাঁকার নামে আরও এক পুলিশ অফিসারের বিরুদ্ধেও হয়রানির অভিযোগ এনেছেন নির্যাতিতা চিকিৎসক। নিজের হাতের তালুতে তিনি লিখেছেন, ‘পুলিশ অফিসার গোপাল বাদনে আমার মৃত্যুর জন্য দায়ী। সে আমাকে চারবার ধর্ষণ করেছে। গত পাঁচ মাস ধরে ওই পুলিশ অফিসারের হাতে আমি ধর্ষণ, শারীরিক এবং মানসিক নির্যাতনের শিকার হয়েছি।’
অভিযুক্ত ওই এসআই-এর বিরুদ্ধে ওই এলাকার পুলিশের ডিএসপি-র কাছে গত ১৯ জুন চিঠি লিখে একই অভিযোগ জানিয়েছিলেন তিনি। সেই চিঠিতে ফলটন গ্রামীণ এলাকার পুলিশের এই দুই অফিসারের বিরুদ্ধে হয়রানির অভিযোগ এনে তাঁদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য পুলিশের ডিএসপি-র কাছে আর্জি জানিয়েছিলেন ওই তরুণী চিকিৎসক। সেই চিঠিতেও তিনি কয়েকজন পুলিশ অফিসারের নাম করে অভিযোগ করেন, ‘আমি প্রচণ্ড চাপের মধ্যে রয়েছি। আপনার কাছে অনুরোধ, যথাযথ তদন্ত করে অভিযুক্ত অফিসারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিন।’ ওই তরুণী চিকিৎসকের মৃত্যুর পরই মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফড়ণবীশের নির্দেশে অভিযুক্ত ওই সাব ইন্সপেক্টরকে সাসপেন্ড করা হয়।

